বেদ অর্থ বিদিত হওয়া, জানা। জীবনবেদ' অর্থ জীবনকে জানা। জীবনবেদের আলােচ্য বিষয় জীবনের সুখ, দুঃখ, প্রেম, প্রীতি, শ্রদ্ধা, জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ, অর্থ, কাম, ধর্ম, মুক্তি। বেদ দিয়ে জীবন বুঝা যায় না, জীবন দিয়ে বেদ বুঝতে হয়। বেদ থেকে জীবনের উৎপত্তি নয়- জীবন থেকে বেদের উৎপত্তি। জীবন নদীর মতাে। নদী মানচিত্র মেনে চলে না। নদী চলার পথ থেকে তৈরী হয় মানচিত্র। জীবন প্রতিটি ক্ষণে অভিনব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। ফলে বদলে যায় জীবন চলার পথ- যুগে যুগে তৈরী হয় নতুন জীবনবেদ।। প্রচলিত জীবনবিধানগুলাে বিশেষ সময়ে, বিশেষ ঘটনার প্রতি, বিশেষ ব্যক্তির সাড়া। সেই রামও নাই, সেই অযােধ্যাও নাই। তবে রামায়নের কর্তৃত্ব থাকবে কেন? শাস্ত্রকে প্রমাণ মানলে জীবন আলােকিত হয় না, বরং মানুষে-মানুষে বিভেদ ও দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পায়। অথচ, আমরা সম্মােহিত হয়ে আছি দ্বন্দ্ব উৎপাদক শাস্ত্রের গণ্ডিতে। অন্ধকারে বিচরণ করলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে না। অন্ধকারের সঙ্গে মানিয়ে চলা মানে দৃষ্টিশক্তির প্রসারণ নয়। কল্পকাহিনীগুলাে অন্ধকারের মতােই। এইগুলাের ব্যাখ্যা আবিষ্কার করা মানে অন্ধকার নিয়ে ঘাটাঘাটি করা। আধ্যাত্মিকতা হলাে নিজেকে দেখা। নিজেকে দেখা মানে বাস্তবতার আলােকে জীবনের সাড়া প্রত্যক্ষণ করা, নিজের মন-মানসিকতা, চিন্তা-চেতনা সম্বন্ধে সচেতন হওয়া। জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন বেদ হলাে কল্পনা, আর জীবন হলাে বাস্তব। কল্পনা বাস্তবতার ব্যাখা দিতে পারে না। কিন্তু বাস্তবতা কল্পনার ব্যাখ্যা দিতে পারে। কল্পনা দিয়ে বাস্তবতা বুঝতে চেষ্টা করলে বাস্তবতা অস্পষ্ট ও ঘােলাটে হয়ে উঠে।