“১৯৭১ ফ্রন্টলাইনের সেরা অপারেশন" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির জন্য এক অনন্য অধ্যায়। প্রায় পাঁচ দশক হতে চললাে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের। সময় থেকে দূরে সরে গেলেও প্রজন্মের কাছে যেন যুদ্ধের স্মৃতি আরাে তরতাজা হচ্ছে। একাত্তরের যুদ্ধের ব্যাপকতাকে কোনাে মাপকাঠি দিয়ে মাপা অসম্ভব। বাংলার বুকে যেমন দুর্দান্ত সব গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে আবার একই সাথে বিশ্বযুদ্ধের মত ভয়াবহ কিছু সম্মুখযুদ্ধও হয়েছে। আমাদের জাতির পিতার নির্দেশ ছিল-“তােমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মােকাবেলা করতে হবে। আর এই কথাটার বিরাট এক ক্যানভাস ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। এই নির্দেশটিই আমার কাছে যুদ্ধে যাওয়ার প্রেরণা ছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম লড়াই ২৬ মার্চ ঐতিহাসিক কুমিড়ার লড়াই আমার নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়েছিল। যা মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে পাক হানাদার বাহিনীর কাছে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এই যুদ্ধে পাকিস্তানী কমান্ডিং অফিসার লেঃ কর্ণেল শাহপুর খান বখতিয়ার ও একজন লেফটেনেন্টসহ বিভিন্ন পদে ১৫২ জন পাকিস্তানী সেনা নিহত হয়। কুমিড়ার এই লড়াইটিই ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধে প্রথম ও মুখােমুখি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। কুমিড়ার যুদ্ধের এই সাফল্য ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের টানিং পয়েন্ট। মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে ২৯ মার্চ ১৯৭১ সালে তার নামে চট্টগ্রামের কালুরঘাটের মদনাঘাটস্থ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে একটা ঘােষণা দেওয়া হয়েছিল। ঘােষণাটি ছিল যার যার অস্ত্র নিয়ে লালদীঘি ময়দানে ক্যাপ্টেন ভূঁইয়ার কাছে রিপাের্ট করুন। সেই দিনের সেই ঘােষণা আর কুমিড়ার লড়াই আজ ইতিহাসের অংশ। তারপর ৩নং সেক্টরের তেলিয়াপাড়া, ধর্মগড়, মুকুন্দপুর, আশুগঞ্জের যুদ্ধেও অসীম সাহসিকতায় নেতৃত্ব দেয়ার সুযােগ হয়। নয় মাসের যুদ্ধের বহুবার মৃত্যুর মুখােমুখি দাঁড়িয়ে মরতে মরতেই বেঁচে যাই। ১৯৭১ : ফ্রন্টলাইনের সেরা অপারেশন’ বইটিতে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের উল্লেখযােগ্য কিছু ফ্রন্টলাইনযুদ্ধের ঘটনা সামরিক এবং ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে চমৎকারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যুদ্ধের বিভিন্ন সময়ে স্বল্প অস্ত্র প্রশিক্ষণেও শক্তিশালী বাহিনীকে নিয়মিত যুদ্ধে নাস্তানাবুদ করার ঘটনা থেকে বিশ্বের যে কোনাে জাতি প্রেরণা খুঁজে নিতে পারবে। এই বইয়ে আমার নেতৃত্বে দুইটি যুদ্ধের ঘটনা উঠেছে। এর মধ্যে কুমিরার যুদ্ধেও ঘটনাটি আমাদের সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন দেশের সেনা একাডেমিতে পড়ানাে হয়। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের সেনা যাদুঘরে ডিসপ্লে বাের্ডে আমার ছবিসহ ঘটনাটি উল্লেখ আছে। আমি এই বইয়ের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আমার বিশ্বাস বাঙালি জাতির বীরত্বের ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এই আয়ােজন সত্যিই প্রশংসনীয়। সবাইকে ধন্যবাদ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।