এককালের কিংবদন্তি ধনুর্ধর তেতসুয়াকে এখন আর তীর-ধনুক হাতে দেখা যায় না! বহুবছর ধরে লোকচক্ষুর অন্তরালে বাস করেন নির্জনে! একদিন এক কৌতূহলী বালক অসংখ্য প্রশ্ন নিয়ে তার সামনে হাজির হয়। সেইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তেতসুয়া ব্যাখ্যা করেন ধনুকের পথ; বুঝিয়ে দেন জীবনের সাথে তীর-ধনুকের অদ্ভুত সাদৃশ্য। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতিমান লেখক পাওলো কোয়েলহো গল্পের সুতো গেঁথে পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেন নতুন জীবনদর্শনের সাথে, ভিত্তিপ্রস্তর নির্মাণ করেন স্বতন্ত্র এক জীবনবোধের। সাধারণ দৃষ্টিতে পৃথিবীর বা জীবনেতে যেই রূপ অধরা থেকে যায়, তাকেই লেখক উন্মোচন করেন কলমের নিখুঁত আঁচড়ে। এবার তেতসুয়া আর শিক্ষানবিশ বালকের গল্পের মোড়কে পাওলো কোয়েলহো বলেছেন, কর্ম আর আত্মার মাঝে সম্পর্ক না থাকলে জীবনে পূর্ণতা আসে না। প্রত্যাখ্যান কিংবা ব্যর্থতার ভয়ে বেঁচে থাকা যেন মৃত্যুর শামিল। বাঁচার মতো বাঁচতে হলে ঝুঁকি নিতে হবে, বুক বাঁধতে হবে অসীম সাহস নিয়ে। চলার পথে যে অপ্রত্যাশিত বাধা আসবে, তাকে আলিঙ্গন করতে হবে দৃঢ়চিত্তে। পরিশ্রম, উদ্দেশ্য নির্ধারণ, ক্ষুরধার চিন্তাশক্তি, ব্যর্থতাকে মেনে নিতে শেখা─জয়ী হওয়ার এইতো মূলমন্ত্র! জীবনকে নতুনভাবে চিনতে চান? ধনুর্ধরের সাথে ধনুকের পথ পাড়ি দিতে আপনি প্রস্তুত তো?
ব্রাজিলিয়ান ঔপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহো ডি’সুজা ১৯৪৭ সালের ২৪ আগস্ট দেশটির রাজধানী রিও ডি জেনেরিওতে জন্মগ্রহণ করেন। একই শহরে তার শিক্ষাজীবনের শুরু এবং বেড়ে ওঠা। আইন বিষয়ে কিছুদিন পড়াশোনার পর ভ্রমণের নেশায় তা আর শেষ করতে পারেননি। ঐ সময়টা ভবঘুরের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছেন মেক্সিকো, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, চিলিসহ ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর পরপরই ছোটবেলার স্বপ্ন বই লেখাকে বাস্তবে রূপ দেন। ১৯৮২ সালে ‘হেল আর্কাইভস’ নামক বই দ্বারা সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তবে এই প্রবেশ আকর্ষণীয় ছিলো না। এমনকি দ্বিতীয় প্রকাশিত বই ‘প্রাক্টিক্যাল ম্যানুয়েল অব ভ্যাম্পায়ারিজম’ তার নিজেরই অপছন্দের তালিকায় ছিলো। ১৯৮৭ সালে ‘পিলগ্রিমেজ’ এর পর ১৯৮৮ সালে প্রকাশ পায় তার আরেক বই ‘দ্য আলকেমিস্ট’। পাওলো কোয়েলহো এর বই হিসেবে ‘দ্য আলকেমিস্ট’ বইটিই মূলত কোয়েলহোর লেখক-জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তবে ‘৮৭ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছিলো ব্রাজিলের একটি ছোট প্রকাশনা সংস্থা থেকে, যারা ন’শোর বেশি কপি ছাপাতে নারাজ ছিলো। ১৯৯৩ সালে একই বই আমেরিকার বিখ্যাত প্রকাশনী হারপার কলিন্স থেকে প্রকাশিত হলে পাঠক মহলে হুলুস্থুল পড়ে যায়। বইটি এখন পর্যন্ত মোট ৮০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যা পাওলো কোয়েলহো এর বই সমূহ এর মাঝে অনন্য। কোয়েলহোর কাহিনীগুলোর বিশেষত্ব হলো তার কল্পনাশক্তির জাদুকরী মোহ। কোনো সরল গল্প দ্বারা তিনি গভীর জীবন দর্শনবোধ পাঠকদের মাঝে সঞ্চালন করতে চান, এবং সফলতার সাথে করেও এসেছেন। পাওলো কোয়েলহো এর বই সমগ্র-তে স্থান পাওয়া উপন্যাসগুলোর মাঝে ‘দ্য আলকেমিস্ট’, ‘ব্রিদা’, ‘দ্য ডেভিল এন্ড মিস প্রাইম’, ‘দ্য জহির’, ‘দ্য ভ্যালকাইরিস’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ‘দ্য মাডি রোড’, ‘দ্য রং গিফট’, ‘দ্য জায়ান্ট ট্রি’, ‘দ্য ফিশ হু সেভড মাই লাইফ’, ‘আই উড র্যাদার বি ইন হেল’, ‘রিবিল্ডিং দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর মতো ছোটগল্পগুলোতেও দর্শনের প্রমাণ মেলে, যা পাঠকদের গভীরভাবে ভাবতে শেখায়। পাওলো কোয়েলহোর আরেক পরিচয় তিনি গীতিকার। বেশ কিছু জনপ্রিয় ব্রাজিলীয় গানের জনক তিনি।