ভাষা-আন্দোলন বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে এক গৌরবময় মাইলফলক, উজ্জ্বল অধ্যায়। মাকে নিয়ে তাে বটেই, মাতভাষা নিয়ে এমন আবেগ আর আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত গােটা। দুনিয়ায় সত্যিই বিরল। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়েই। বাঙালি নতুন করে খুঁজতে শুরু করে নিজের পরিচয়। আর। আত্মপরিচয় সন্ধানের সংগ্রাম-যুখর পথ ধরেই এ জাতি পৌছে যায় মহান মুক্তিযুদ্ধে, মাতৃভূমির মুক্তির লড়াইয়ে। অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। শুরুটা কিন্তু ভাষা-আন্দোলন থেকেই। বাঙালির মাতভাষা বাংলা সাহিত্য জ্ঞানবিজ্ঞান-দর্শনচর্চায় সমৃদ্ধ এ ভাষা । তবু এ ভাষার উপর আঘাত নেমে আসে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার (১৪ই আগস্ট ১৯৪৭) শুরু থেকেই। বাঙালির এই বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানেরই অংশ। দেশের বেশিরভাগ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। অথচ পাকিস্তানের। রাষ্ট্রভাষা ঘােষণা করা হয় উর্দকে। বাঙালিরা উর্দুর পাশাপাশি। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা করার। দাবি জানায়। বাঙালির ভাষা-আন্দোলনের সূচনা এখান থেকেই। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্যে বাংলা মায়ের সােনার ছেলেরা পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায়। আমরা তাদের শ্রদ্ধা জানাই বিচিত্তে। সেই ভাষা-শহীদদের স্মরণে গড়ে ওঠা শহীদ মিনার আমাদের জাতীয় আবেগের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত । তবু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় একুশে উদ্যাপন দিনে দিনে শুধু আনুষ্ঠানিকতার পাকে বন্দি হয়ে পড়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে। আসতে হলে ভাষা-আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস জানা দরকার।এই বিবেচনা থেকেই আমাদের ভাষা-আন্দোলন : কিশাের। ইতিহাস' বইটি গল্প বলার ভঙ্গিতে রচনা করা হয়েছে। সেই অর্থে কিশাের তরুণসহ সব বয়সের পাঠক যদি এ বইটিকে নিরেট ইতিহাস না ভেবে ভাষা-আন্দোলনের ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত গল্প বলে গ্রহণ করে, তাতেও আপত্তি নেই।