১৫২৬ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত উপমহাদেশ শাসনকারী মুঘলদের ইতিহাসে শাহজাদা দারাশিকোহর মতো চরিত্র আরেকটিও নেই। পঞ্চম মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার প্রিয়তম জ্যেষ্ঠপুত্র, দার্শনিক-বুদ্ধিজীবী দারাশিকোহকে উত্তরাধিকারী রূপে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোহিনূর-খচিত মুকুট আর ময়ূর সিংহাসন পাওয়ার বদলে তিনি ভাগ্যাহত হয়ে প্রাণ হারান ক্ষমতার ভ্রাতৃঘাতী দ্বন্দ্বে। তথাপি পরাজিত ও নিহত দারা প্রায় সাড়ে তিনশত বছরের মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে সম্রাট না হয়েও সম্রাটের মতোই আলোচিত। মহান মুঘল আকবরের দর্শনচর্চা, সমন্বয়বাদ, উদারনীতির উত্তরাধিকার তিনি। বিশ্ববিশ্রুত মুঘল মিনিয়েচার আর্টের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক দারার অ্যালবাম এখনো সংরক্ষিত ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। দারার চিন্তা ও কর্মের নানা দিক অদ্যাবধি বিশ্বব্যাপী আলোচিত। বিশেষত ধর্মনিরপেক্ষ ও সহনশীল ভারতের বীজমন্ত্র লুকিয়ে রয়েছে দারার চিন্তাধারায়। রাজনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে ব্যর্থ, কিন্তু শিল্প ও দর্শনচর্চায় সমুজ্জ্বল দারাশিকোহ যেন মুঘল সাংস্কৃতিক পরম্পরার এমনই এক ব্যক্তিত্ব, যাকে তুলনা করা যায় শেকসপিয়ারের ‘হ্যামলেট’-এর প্রিন্স অব ডেনমার্কের সঙ্গে। এক বিয়োগান্ত চরিত্র হয়ে তার মস্তক সমাহিত তাজমহল প্রাঙ্গণে আর শরীর দিল্লির হুমায়ূন মাকবারার কবরগাহে। মুঘল সিংহাসন বঞ্চিত শাহজাদা দারাশিকোহর জীবন ও কর্মের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ আখ্যানগুলো উন্মোচিত হয়েছে ড. মাহফুজ পারভেজ রচিত 'দারাশিকোহ: মুঘল ইতিহাসের ট্রাজিক হিরো' গ্রন্থে। শাহজাদা দারাশিকোহর বহুমাত্রিক ও বেদনাময় জীবনালেখ্য গ্রন্থাকারে প্রকাশ করতে পেরে প্রকাশনা ঐতিহ্যে ৭০ বছরের আভিজাত্যে ঋদ্ধ প্রতিষ্ঠান 'স্টুডেন্ট ওয়েজ' গর্বিত।
ড. মাহফুজ পারভেজ। পিতা: ডা. এ.এ, মাজহারুল হক, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। মাতা: নূরজাহান বেগম, সমাজসেবী। জন্ম: ৮ মার্চ ১৯৬৬, কিশোরগঞ্জ শহর। পড়াশোনা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচ,ডি)। পেশা: অধ্যাপনা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। লেখালেখি, গবেষণা ও সাহিত্য সাধনায় ব্রতী। প্রকাশিত গ্রন্থ কুড়িটি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- গবেষণা-প্রবন্ধ: বিদ্রোহী পার্বত্য চট্টগ্রাম ও শান্তিচুক্তি, দারাশিকোহ: মুঘল ইতিহাসের ট্র্যাজিক হিরো। দ্বিশত জন্মবর্ষে বিদ্যাসাগর। উপন্যাস: পার্টিশনস, নীল উড়াল। ভ্রমণ: রক্তাক্ত নৈসর্গিক নেপালে। গল্প: ইতিহাসবিদ, ন্যানো ভালোবাসা ও অন্যান্য গল্প। কবিতা: মানব বংশের অলংকার, আমার সামনে নেই মহুয়ার বন, গন্ধর্বের অভিশাপ।