১৬ ডিসেম্বর’৭১। প্রত্যুষে পূর্ব আকাশ আবির রঙে রাঙিয়ে নতুন দিনের নতুন সূর্য উদিত হলো। আনোয়ার বললো, দেখ কবির আজকের আকাশটা একটু বেশি রক্তরাঙা। তুই কি বুঝতে পারছিস আমাদের বিজয়ের সময় ঘনিয়ে এসেছে। তাইতো লাখো শহিদের রক্ত বুকে নিয়ে আজ সূর্য উদিত হয়েছে। আমি বললাম, তুই ঠিকই বলেছিস। আমরা শত্রæদের মনোবল নি:শেষ করে দিয়েছি। যুদ্ধ করে টিকে থাকার ক্ষমতা ওদের নেই। আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে আনোয়ার বললো-তুই ঠিকই বলেছিস কবির। আমার কি মনে হচ্ছে জানিস? কি? মনে হচ্ছে আজই আমরা স্বাধীনতা লাভ করবো। কিন্তু এখন গল্প করার সময় নয়। সামনে এখনও শত্রæর শেষ বাঙ্কারটি টিকে আছে। এই কথা বলেই শেষ বাঙ্কারটি টার্গেট করে সে এলএমজির ব্রাশফায়াল শুরু করলো। এরই মধ্যে তার সহযোদ্ধারা এনারগা রাইফেল থেকে গ্রেনেড ছুড়া শুরু করে দিয়েছে। কিছু সময় গুলিবর্ষণ ও গ্রেনেড ছোঁড়ার পরই আনোয়ার নিজের অবস্থান ছেড়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে গেলে আমি তার হাত ধরে বাধা দিলাম। কিন্তু কে শোনে কার কথা। একটু মাথা উঁচু করতেই একটি বুলেট এসে তার বাম বুক ভেদ করে বেরিয়ে গেল। মা বলে ডাক দিয়েই সে আমার কোলের উপর এলিয়ে পড়লো। ব্যথাভরা শরীর অথচ মুখে তুপ্তির হাসি। অল্প সময়ের মধ্যেই সে শহিদের খাতায় নাম লেখালো। আনোয়ারের ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী সত্যিই সেদিন বিকেলের মধ্যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেল।
জিয়াউল হক মাতা: আজিজা খাতুন, পিতা হাজী কিয়ামউদ্দিন বিশ্বাস, ১৩ এপ্রিল-১৯৫৪ তারিখে খোঁকড়া, পাবনায় জন্ম। লেখাপড়া করেছেন বাঁশেরবাদা হাই স্কুল, ঈশ্বরদী, পাবনা, সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ পাবনা। কলেজে পড়াকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ। স্বাধীনতা-উত্তর কালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইসলামের ইতিহাসে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা আমিনউদ্দিন আইন কলেজ হতে এলএলবি ডিগ্রি লাভ। ১৯৮৩ সালে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন সাব-রেজিস্ট্রার পদে চাকুরীতে যোগদান এবং ২০১৬ সালে জেলা-রেজিস্ট্রার পদ হতে অবসর গ্রহণ। স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখির সাথে জড়িত। স্বাধীনতা উত্তর কালে মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা কবিতা ও গল্প বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণের পর থেকে কবিতা, ভ্রমণকাহিনি, উপন্যাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও গবেষণামূলক গ্রন্থ লেখার কাজে পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করেছেন। প্রকাশিত গ্রন্থসমুহ: জ্যোৎস্নাভরা রাতে, কাব্যগ্রন্থ। গিরিঝরনা বাংলাদেশ, ভ্রমণকাহিনি। (১) শত মুক্তিযোদ্ধার বিজয়গাথা, (২) শত মুক্তিযোদ্ধার বিজয়গাথা-২, (৩) শত মুক্তিযোদ্ধার বিজয়গাথা-৩, (৪) শত মুক্তিযোদ্ধার বিজয়গাথা-৪, (৫) শত মুক্তিযোদ্ধার বিজয়গাথা-৫, (৬) শত মুক্তিযোদ্ধার বিজয়গাথা-৬, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থ। রক্তে ভেজা শার্ট, মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস। (১) হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ইতিহাস, (২) বাংলাদেশের পাহাড়শুমারি, গবেষণামূলক গ্রন্থ। মোট গ্রন্থ সংখ্যা: ১২।