আনিসুজ্জামান প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবী, বাঙালির বাতিঘর। মনীষা, প্রজ্ঞা, জ্ঞান এবং বুদ্ধির দীপ্তিতে সমকালে সকলকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ-এই তিন জামানার যুগ-জীবনের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তিনি। বাঙালির জাতীয় জীবনের গৌরবময় অধ্যায় ভাষা-আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে ছিলো তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ। সংবিধানের বঙ্গানুবাদসহ রাষ্ট্রীয় নানা গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। যুক্ত ছিলেন সাংস্কৃতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক বহুবিধ কর্মকা-ে। পরিমিত ও সারগর্ভ বক্তৃতাগুণ এবং আপন ঔদার্যে ছিলেন সকলের প্রিয়প্রাত্র। আজীবন বাঙালির স্বরূপ-অন্বেষণ করেছেন। উড়িয়েছেন মানবতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার জয়ধ্বজা। সবকিছুর ওপরে ছিলেন যশস্বী অধ্যাপক এবং ভাষা-সাহিত্যের গবেষক। ‘মুসলিম-মানস ও বাংলা সাহিত্য’, ‘পুরনো বাংলা গদ্য’, ‘কালনিরবধি’, ‘বিপুলা পৃথিবী’ প্রভৃতি গ্রন্থ তাঁর অমর সৃষ্টি। কর্মের স্বীকৃতি-স্বরূপ লাভ করেছেন একুশে পদক, পদ্মভূষণ, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নানা পুরস্কার এবং সম্মাননা। অলঙ্কৃত করেছেন জাতীয় অধ্যাপকের পদ। এই মানবতাবাদী, উদার, অসাম্প্রদায়িক এবং প্রগতিশীল মনীষীর জীবন ও কর্মসাধনা নিয়ে ড. এম আবদুল আলীম রচনা করেছেন ‘আনিসুজ্জামান’ নামক এ গ্রন্থ। গ্রন্থটি পাঠ করে নতুন প্রজন্ম তো বটেই, সকল পর্যায়ের পাঠকই বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।
ড. এম আবদুর ইতিহাস-ঐতিহ্যসন্ধানী গবেষক। সাহিত্য-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য বিষয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থ তিরিশের অধিক। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো - ভাষা-আন্দোলন-কোষ, রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন : জেলাভিত্তিক ইতিহাস, ত্রিশোত্তর বাংলা কাব্যে বিচ্ছিন্নতার রূপায়ণ, বাংলা কাব্যের স্বরূপ ও সিদ্ধি-অন্বেষা, শহীদ কাদরীর ত্রিভুবন, রবীন্দ্রনাথ উত্তর-আধুনিকতা ও বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন, পাবনায় ভাষা-আন্দোলন, সিরাজগঞ্জে ভাষা আন্দোলন, আনিসুজ্জামান, সুচিত্রা সেন, বন্দে আলী মিয়া : কবি ও কাব্যরূপ, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকা, আওয়ামী লীগ ও ভাষা আন্দোলন প্রভৃতি। নেশা লেখালেখি হলেও পেশা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা। এক সময় ঢাকা কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ও কলা অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার লাভ করেছেন। তাঁর জন্ম ১৯৭৬ সালের ১ ডিসেম্বর। জন্মস্থান পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার গৌরীগ্রামে।