"মুক্তিযুদ্ধের কবিতা" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে আমার কবিজন্ম। আমার পুরাে সত্তার জন্ম। আমি বিশ্বাস করি মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ অবিচ্ছেদ্য এবং বাঙালী জাতির প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র,বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৭১-এর ছাব্বিশে মার্চ। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। একাত্তরের অবরুদ্ধ ঢাকায়, তৎকালীন দৈনিক আজাদ-এর ‘মুকুলের মহফিল’ বিভাগে। সম্ভবতঃ জুন-জুলাই মাসে। কবিতার নাম এখানে একটা গ্রাম ছিলাে। ছদ্মনামে লেখা। কবিতাটিতে রূপকের ব্যবহার ছিলাে প্রচুর। তার আড়ালে ছিলাে একটি ছায়ানিবিড় গ্রামের ওপর পাক হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও ধ্বংসলীলার বিবরণ। বিভাগীয় সম্পাদক কবি হাবীবুর রহমান (বাগবান) কবিতাটির গূঢ়ার্থ ধরতে পেরেছিলেন। তবু তিনি সাহস করে কিশাের-কবিতাটি ছেপে দিয়েছিলেন। অধিকাংশ পাঠক কবিতার গভীরে যাননি; ঐ আতঙ্কের সময় তার অবকাশও ছিলাে না। মুদ্রিত কবিতাটির নিউজপ্রিন্ট কপি হারিয়ে গেছে বহুকাল আগে, আমার অনেক কবিতার মতাে। স্বনামে আমার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় তৎকালীন দৈনিক বাংলা-য় ১৯৭২ সালে। স্বাধীন বাংলাদেশে বিরতি দিয়ে-দিয়ে আমি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কবিতা, গল্প ও উপন্যাস লিখেছি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সাহিত্য রচনায় ঘটনার নৈকট্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরপর স্বাধীন দেশে রচিত নানা বয়সের অনেক কবির রচনায় আবেগের আতিশয্য বক্তব্যকে বিঘ্নিত করেছে। এজন্য সময়ের উল্লেখযােগ্য দূরত্বের প্রয়ােজন ছিলাে। পনেরােই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ড সেই দূরতুকে কমিয়ে দিয়েছে ব্যাপকভাবে। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট জাতীয় জীবনের ঐ ট্রাজেডি থেকে আরাে বিশদভাবে জাতির সামনে উঠে আসতে থাকে। এসবেরই ধারাবাহিকতায় গণহত্যা, অবরুদ্ধ বাংলাদেশ, রণাঙ্গন এবং স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের বৈরী স্রোতগুলাে নিয়ে আমার মুক্তিযুদ্ধের কবিতা। পাশাপাশি কিছু কবিতায় দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষাও ধ্বনিত হয়েছে।