এ বইয়ের প্রবন্ধ কয়টিতে বর্তমানের কথা খুব ভালো ভাবেই আছে। এই বর্তমান অত্যন্ত প্রত্যক্ষ এবং ভীষণ দুঃসহ। বিদ্যমান অবস্থার সাক্ষ্য হিসেবে অনেক ঘটনা এখানে উপস্থিত। এমনিতে মনে হবে ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন, এমনকি বিক্ষিপ্ত। কিন্তু এগুলো সবই পুঁজিবাদী উন্নতির ধারাপ্রবাহের সঙ্গে যুক্ত। ভেতরে ইতিহাস আছে। সে-ইতিহাস অতীত থেকে চলে এসেছে বর্তমানে; এবং বর্তমান প্রসারিত হবে ভবিষ্যতে, আশঙ্কাটা এই রকমেরই। সংকট বাড়ছে। এর থেকে অব্যাহতির পথটা অজানা নয়। কিন্তু তাকে স্পষ্ট করে সামনে আনা আবশ্যক। লেখক ওই কাজেই যুক্ত হতে চেয়েছেন। সমসাময়িককে তিনি সংযুক্ত করেছেন ইতিহাসের সঙ্গে, এবং দেখাতে চেয়েছেন যে এই ধারা অব্যাহত থাকলে বিপদ কী ভাবে বৃদ্ধি পাবে। তিনি আশাবাদী। তাঁর ধারণা মানুষ অবশ্যই রুখে দাঁড়াবে, মোড় ঘোরাবে ইতিহাসের ধারার, সম্পত্তি ও সম্পদের ব্যক্তিমালিকানার জায়গাতে প্রতিষ্ঠা ঘটাবে সামাজিক মালিকানার। তিনি যুক্তি ও প্রমাণ দিয়ে কথা বলেছেন, তাঁর বিশ্লেষণ মনগড়া নয়; তবে সেখানে আবেগ যে অনুপস্থিত তা বলা যাবে না। ক্রান্তিকালের কথাটা নতুন নয়, আগেও বলা হয়েছে; কিন্তু সভ্যতা যে এখন একটি বিশেষ মুহূর্তে এসে পৌঁছেছে সেটা বলা দরকার। লেখক সে-কাজটিই করতে চেয়েছেন। হৃদয়গ্রাহী এই প্রবন্ধগুলো পাঠককে সাহায্য করবে ভাবতে। আর ভাবাটা যে এখন অত্যাবশ্যক সে নিয়ে তো কোনো সন্দেহ নেই।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (জন্ম. ১৯৩৬) পেশায় সাহিত্যের অধ্যাপক এবং অঙ্গীকারে লেখক। এই দুই সত্তার ভেতর হয়তো একটা দ্বন্দ্বও রয়েছে, তবে সেটা অবৈরী, মোটেই বৈরী স্বভাবের নয়। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক, অবসরগ্রহণের পর ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রফেসর এমেরিটাস হিসাবে মনোনীত হয়েছেন। তিনি শিক্ষা লাভ করেছেন রাজশাহী, কলকাতা, ঢাকা এবং ইংল্যান্ডের লীডস ও লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখার কাজের পাশাপাশি তিনি ‘নতুন দিগন্ত’ নামে সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। তার গ্ৰন্থসংখ্যা আশির কাছাকাছি। তার অকালপ্রয়াত স্ত্রী ড. নাজমা জেসমিন চৌধুরীও লিখতেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।