মোহাম্মদ মাসুম এবং তার পরিবারের সবার সাথে আমার পরিচয় অনেক দিনের। আমার বাবা সরকারি চাকুরিজীবী হিসেবে যেভাবে পুরো বাংলাদেশের নানা শহরে চাকরি করেছেন, মোহাম্মদ মাসুম এবং তাঁর পরিবারও ঠিক একইভাবে বাবার চাকরির কারণে সারা দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ঘটনাক্রমে বগুড়ায় কিছুদিন একই সময় একই সাথে আমাদের সময় কেটেছে। তখন আমাদের পরিচয় হয়েছে এবং এতো বছর পরেও সেই পরিচয়ের বন্ধন অটুট রয়ে গেছে। ‘সোনাঝরা দিনগুলো’ বইটি মোহাম্মদ মাসুমের শৈশব জীবনের স্মৃতির ওপর স্মৃতিচারণামূলক একটি বই। বইয়ের শুরুতে লেখক বলেছেন, হারানো দিনের অনেককিছু তিনি স্মরণ করতে পারেন না, স্মৃতি তাকে ফাঁকি দিতে শুরু করেছে। বইটি পড়ে আমি বুঝতে পেরেছি তার এই উক্তি নেহায়েতই বিনয়সুলভ উক্তি। কারণ যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র খুঁটিনাটি এই বইয়ে লেখা আছে সেটি আমাদের কাছাকাছি বয়সের কোনো মানুষের মনে থাকার বিষয়টি প্রায় ‘অতিপ্রাকৃতিক’ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আমি যদি যাদের সান্নিধ্যে আমার শৈশব কাটিয়েছি তাদের নাম স্মরণ করার চেষ্টা করতাম তাহলে সব মিলিয়ে বড়জোর ডজনখানেক নাম স্মরণে আসতো, সেটিও পূর্ণাঙ্গ নাম হতো না এবং তাদের কে এখন কোথায় আছে সে সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র ধারণা থাকতো না। মোহাম্মদ মাসুম তার মস্তিষ্কের অসাধারণ স্মৃতিশক্তির কারণে এই অসাধ্য সাধন করেছেন। শুধুমাত্র এই কারণেই এই বইটি অনেকের কাছে একটি মূল্যবান দলিল হিসেবে পরিচিত হবে। সোনাঝরা দিনগুলো বইটির সময়কাল আজ থেকে ষাট-সত্তুর বছর আগে শুরু হয়েছে। আমাদের প্রজন্ম সেই সময়টুকু অতিক্রান্ত করে এসেছে। সেই সময়কার ইতিহাসটুকু আমরা জানি, নিজের চোখে দেখে এসেছি। পরবর্তী প্রজন্ম কিংবা বর্তমান প্রজন্ম সেই সময়ের কথা জানে না। অনেক কিছু আছে যেগুলো হয়তো তারা এখন কল্পনাও করতে পারবে না। সেই হিসেবে এই বইটি সেই সময়ের একটি অসাধারণ প্রতিচ্ছবি। আমি যখন সেটা পড়েছি তখন অনেক কিছু নূতন করে আমার মনে পড়েছে। কাজেই অন্যদের কেমন অনুভূতি হবে সেটি আমি অনুমান করতে পারি, সেটি হবে একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা। মোহাম্মদ মাসুম এবং তাদের ভাইবোনদের সবাই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী ছিলেন। তার ছাত্র জীবনের লেখাপড়ার সেই স্মৃতিগুলো এই বইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্কুলের পর স্কুল পরিবর্তন করে কোথাও থিতু না হয়েও এতো চমৎকারভাবে যে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া যায় এবং পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখা যায় সেটি মোহাম্মদ মাসুমের শৈশব জীবনে আমরা দেখতে পেয়েছি। আমি নিজে যতটুকু আগ্রহ নিয়ে সোনাঝরা দিনগুলো পড়েছি, অন্যান্য পাঠকেরাও সেই একই আগ্রহ নিয়ে বইটি পড়বেন সেই কামনা করছি।