ভূমিকার আদলে ১. ২০২০ সন। পালিত হচ্ছে মুজিববর্ষ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে। এই মহামানবের জন্মদিন ১৭ মার্চ ১৯২০ সন। বর্ষ পালন সাফল্যমণ্ডিত হবে তখনই যখন আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহত্তম সুমহান আদর্শ ও নীতিমালা ছড়িয়ে দিতে পারব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে । দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বময়। মুজিব বর্ষ যেন আদর্শিক ধারায় শাণিত চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। বাণিজ্যিক চেতনায় যেন আচ্ছন্ন না হই। দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সুশাসনের ও মানবসেবার ব্রত নিয়ে যেন নিজেদের উৎসর্গ করতে পারি। ২. যুদ্ধ বিধ্বস্ত এক কঠিন সংকটকালীন সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাধ্য হয়ে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব নিতে হয়। সার্বিকভাবে অবহেলিত একটি প্রদেশকে জাতীয় রাষ্ট্রে উন্নীত, সচল ও সবল করার ক্ষেত্রে যে প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, সাংবিধানিক, বিচারিক, সামাজিক কাঠামাে নির্মাণ করতে হয়েছে। সামাজিক কোন জাদুমন্ত্রে বিরাজমান ভয়ংকর সমস্যাগুলাে মােকাবিল করে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালিত করেছিলেন, তা আজ গভীর গবেষণার বিষয়। তাকে তার সমগ্র জীবনের লালিত স্বপ্ন-সাধনা, দুঃখী মানুষের মুক্তির লক্ষে আদর্শ ও নীতি বাস্তবায়নে যে পদক্ষেপসমূহ নিয়েছিলেন তা শুধু সমকালকে আলােকিত করেনি, মহাকালের পথ নির্মাণে তা ছিল প্রদীপ্ত বাতিঘর। ৩. ধ্বংসের উপত্যকায় দাঁড়িয়ে স্বাধীন দেশে যেক্ষেত্রে প্রয়ােজন ছিল সহযােগিতা তার পরিবর্তে প্রতিবিপ্লবী শক্তি কীভাবে নাশকতা, জাতিদ্রোহী কর্মকাণ্ড, খুন-হত্যা, ছিনতাই, রাহাজানি, পুলিশ ফাঁড়ি লুট, বন্ধুরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত অপহরণ জিম্মি করার চেষ্টা এমনকি সংসদ সদস্যকে হত্যা করার নৃশংস তৎপরতায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ছিন্নভিন্ন করতে চেয়েছিল, তার সংক্ষিপ্ত তথ্য উপাত্ত লিপিবদ্ধ হয়েছে দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় গ্রন্থে। লিপিবদ্ধ করতে গিয়ে মূল তথ্য, প্রতিবেদন, উপাত্ত, সংবাদ-সূত্র অবিকৃত রাখার সযত্ন প্রচেষ্টা ছিল। তারপরেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারিখের বিভ্রাট থাকতে পারে, থাকতে পারে বাক্য-রীতির পরিমার্জন ও বর্ণবিন্যাসে ভুলত্রুটি। এটি কোনাে গবেষণা গ্রন্থ নয়। যারা দেশ, জাতি ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সত্যনিষ্ঠতায় নির্মোহ বিচারে অগ্রসর হবেন তাদের জন্য এটি হবে সংক্ষিপ্ত আঁকরসূত্র। ৪. ১৯৭২ সন থেকে ১৯৭৫ সনের ১৫ই আগস্ট পর্যন্ত ৪টি খণ্ডে জাতির পিতার রাষ্ট্রচিন্তা, রাজনৈতিক দর্শন, আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি-কৃষক, শিল্প-বাণিজ্য, শ্রমিক ও শ্রম মালিকানা, কর্মসংস্থান, দক্ষ মানব-সম্পদ গড়ে তােলা, আয়-বণ্টন, সর্বোপরি শােষণহীন অসাম্প্রদায়িক সােনার বাংলা নির্মাণের জন্য সদূর প্রসারী পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন যার অপরিহার্যতা এবং প্রাসঙ্গিকতা কোনাে দিন ফুরিয়ে যাবেনা-নিঃশেষ হবে না। ৫. বইটির তথ্য উপাত্ত সংগ্রহে কাজ করেছেন এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী। তাদের মধ্যে অনিম সাইয়িদ, আন্না আক্তার, ওসমান সজিব, নাসরিক আক্তার, ঝর্ণা আক্তার, অ্যাডভােকেট তানজিমা, অ্যাডভােকেট আল মামুন মৃধা ও জিত্তম মৃধা প্রমুখ। তথ্য সংগ্রহে শ্রম দিয়েছেন আবদুল মতিন, ডা. মিতুন আক্তার ও ইসমাইল হােসেন প্রমুখ। বাংলাদেশ আর্কাইভস-এর সিনিয়র রিসার্স অফিসার ইলিয়াস আলী মিয়া সর্বোতভাবে সহযােগিতা করেছেন।
Professor Abu Sayed অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এককালীন শিক্ষক ও রাকসুর ভিপি । সত্তরের নির্বাচনে নং সেক্টরের উপদেষ্টা ও ক্যাম্প ইনচার্জ। গণপরিষদে বাহাত্তরের খসড়া সংবিধান সংরচনা কমিটির অন্যতম সদস্য। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক পাবনা জেলা গভর্ণর ' ডেজিগনেট । সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী। এছাড়া জাতীয় প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অভিজ্ঞতাঋদ্ধ। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ফ্যাক্টস্ এন্ড ডকুমেন্টস: বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, মেঘের আড়ালে সূৰ্য, ছোটদের বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব, আঘোষিত যুদ্ধের ব্ল-প্রিন্ট, ব্রুটাল ক্রাইমস্, বাংলাদেশের স্বাধীনতা: যুদ্ধের আড়ালে যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ: সিক্রেট ডিপ্লোম্যাসি, মুক্তিযুদ্ধ: উপেক্ষিত গেরিলা, জেনারেল জিয়ার রাজত্ব, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিত ও গোলাম আযম, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঐতিহাসিক রায়, বাংলাদেশের গেরিলা যুদ্ধ, যুদ্ধাপরাধ: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ, বাংলাদেশ থ্রেট অব ওয়ার, একাত্তরে বন্দী মুজিব: পাকিস্তানের মৃত্যু যন্ত্রণা, সমাজ বদলে বঙ্গবন্ধুর ব্ল-প্রিন্ট, মুক্তিযুদ্ধের দলিল লণ্ডভণ্ড এবং অতঃপর, বাংলাদেশের স্বাধীনতা: কুটনৈতিক যুদ্ধ ইত্যাদি।