বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধ একটি শাখা ছোটগল্প। ছোটগল্পকে আজকের আলোচিত আসনে আনতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান অদ্বিতীয়। রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা ছোটগল্পে প্রথাগত পরিবর্তন সাধিত হয়। এই পরিবর্তন কল্লোলীয় ভাবধারার সংস্পর্শেই হয়েছে। কল্লোলীয় ভাবধারার একজন শক্তিমান লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্র। প্রেমেন্দ্র মিত্রের গল্পগুলো নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জনজীবনের করুণ আলেখ্য। প্রতিটি গল্পের আঙ্গিক নির্মাণে তিনি সফল শিল্পী। কল্লোল যুগের স্বতন্ত্র লেখক হিসেবে প্রেমেন্দ্র মিত্র আবেগকে প্রশ্রয় না দিয়ে বরং বাস্তবতাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের হাহাকার, কষ্ট, অপ্রাপ্তি, সংকট প্রতিনিয়ত তাঁর গল্পে প্রতিফলিত হয়েছে। জীবনের মর্মভেদী এই বিশ্লেষক ত্রিশ শতকের ভুক্তভোগী সমাজ জীবনের বাস্তব ও নির্মম সত্যকে তাঁর ছোটগল্পে তুলে ধরেছেন। তাঁর জীবনদর্শনের বিচিত্র মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর গল্পে। তিনি গোটা মানুষের জীবনের অর্থ খুঁজেছেন। তাঁর ‘শুধু কেরানী’ গল্প লেখার প্রেরণা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘যাঁদের কথা কেউ লেখে না, যাদের জীবনে চোখ ধাঁধানোর ছড়াছড়ি নেই। তাদের কথা লেখবার একটা তাগিদ এ গল্পের অনেক আগেই আমার মনের মধ্যে কোথায় যেন ছিল।’ প্রেমেন্দ্র মিত্রের গল্পে জীবনবোধের যেমন বৈচিত্র্য ও গভীরতা আছে; তেমনি শিল্প-অভিযাত্রায়ও তিনি প্রাগ্রসর ও নান্দনিক। প্রেমেন্দ্র মিত্রের গল্প পুরানো হয় না। পৃথিবীতে যতদিন মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের অস্তিত্ব থাকবে ততদিন তাঁর গল্প জীবন্ত রূপ লাভ করবে। চিন্তা, মনন, ভাবনায় ও আধুনিকতায় এক চমৎকার শিল্পী প্রেমেন্দ্র মিত্র। তিনি গল্পের শিল্প সৌকর্য নির্মাণে এবং প্রকরণ বৈচিত্র্য ও উপস্থাপনায় সার্থক কারিগর।
প্রেমেন্দ্র মিত্র ( জন্ম: ১৯০৪ - মৃত্যু: ৩ মে, ১৯৮৮) একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বাঙালি কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং চিত্রপরিচালক। বাংলা সাহিত্যে তাঁর সৃষ্ট জনপ্রিয় চরিত্রগুলি হল ঘনাদা, পরাশর বর্মা, মেজকর্তা এবং মামাবাবু।