বইটিকে মোটাদাগে দুটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অংশে শিক্ষাজীবনের বর্ণনা,বাংলাদেশের স্মৃতি ইত্যাদি ফুটে উঠেছে। এবখ শেষ অংশে,মিলিটারি জীবনের যাত্রা এবং সম্পূর্ণ এক নতুন জগতের সন্ধানের স্মৃতি... ১৯৪৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন ব্রি জে এম সাখাওয়াত হোসেন। তার পৈতৃক বাড়ি বরিশালের হিজলায় এবং নানাবাড়ি ভোলার জেলার মনপুরার বিখ্যাত চৌধুরী পরিবার।একদম গ্রামের অন্যান্যদের মতো জীবন অতিবাহিত করেছে লেখক।বাবার সরকারি চাকরির দরুন দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘোরার সৌভাগ্য হয়েছিলো।বাবার পশ্চিম পাকিস্তানে বদলি হয়ে গেলে সেখানেও তারা পরিবার সহ চলে যান।ঢাকায় তার পড়াশুনার হাতেখড়ি। তারপর,বদলির কারণে রংপুরে চলে যান।সেখানেই জিলা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন তিনি।এশিয়ার পঞ্চম পুরাতন স্কুল অর্থাৎ যশোর জিলা স্কুলের সেই দুরন্তপনার দিনগুলো উঠে এসেছে এখানে।তারপর,তৎকালীন পাকিস্তানের রাজধানী করাচিতে চলে যান।সেখানে সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে নতুন জীবনের আগমন! বাংলা স্কুলে বাংলাভাষী প্রধান শিক্ষকের দাবিতে একদিন হঠাৎ করে দেখা হয়ে যায় জুলফিকার আলি ভুট্টোর সাথে।তিনি তাদের চা খাবার কথা বলেছিলেন।এই সেই ভুট্টো যার নির্দেশেই ১৯৭১ সালে বাংলার ৩০ লক্ষ মানুষের জীবন দিতে হয়েছিলো।তারা তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী ফকা চৌধুরী(চট্টগ্রামে বাড়ি ছিলো)র সাথে দেখা করে দাবি জানাতে গিয়েছিলো। পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়েই মিলিটারি জীবনে পদার্পণ।নিয়োগের পূর্বে যখন অভিভাবকের সাক্ষর প্রয়োজন তখন বাবার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি জানতে পারেন।প্রথমে তো রাজিই হচ্ছিলেন না,পরে সহকর্মীর কথাতে কিছুটা ভরসা পেয়ে ছেলের স্বপ্নের দুয়ারে আর বাধা হয়ে দাঁড়ান নি ডাঃ বাবা।এরপরে যাত্রা শুরু হয় পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি স্কুলের।সিনিয়রদের বুলিং,দৌঁড়ানো,সূর্যের আলো ফোটার পূর্বেই ঘুম থেকে জাগা,কাঁটাচামচ দিয়ে খাবার খাওয়া সবই নতুন জীবনের হাতছানি ছিলো মাত্র।এভাবে ছয়মাস কেটে যায় কীভাবে সেটা টেরই পাওয়া যায় না।সব ফর্মালিটি শেষে পরিবারের সাথে দেখা করতে ফিরে আসেন লেখক।দীর্ঘ ছয় মাসে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছিলো। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হয়ে উঠলেন কমিশন প্রাপ্ত কর্মকর্তা!🌻 ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, মেজর জিয়াউর রহমান কিংবা আলতাফ চৌধুরির(পরে বাংলাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।বাড়ি বরিশালে,লেখকে বাড়ি বরিশালে জানতে পেরে লেখককে অফিসার্স মেসে দাওয়াত দিয়েছিলেন।লেখক,পরে সেখানে গিয়েছিলেনও) সম্পর্কে জানা যাবে।বাঙালি সিনিয়র অফিসাররা কত স্নেহ করতেন তাদের তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ফুটে উঠেছে বর্ণনায়।
Brigedier J.M. Sakaoat Hosen Ret. ১৯৪৮ সনের ১ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সনে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় দু’বছর পাকিস্তানের বন্দি শিবিরে কাটিয়ে ১৯৭৩ সনে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১৯৭৫ সনের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ৪৬ ব্রিগেডে স্টাফ অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৭৯-৮১ সনে ঢাকায় সেনাসদরে গুরুত্বপূর্ণ পদে অপারেশন ডাইরেক্টরেট নিয়োজিত হন। পরে তিনি ব্রিগেডের অধিনায়ক হিসেবে দুটি ইনফেনট্রি ব্রিগেড ও একটি আর্টিলারি ব্রিগেডের অধিনায়ক ছিলেন। লেখক বাংলাদেশের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করে দ্বিতীয়বারের মত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিখ্যাত ইউ এস এ কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ জেনারেল কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তিনি পাকিস্তানের ন্যাশনাল ডিফেন্স এ ডি সি ইসলামাবাদ ইউনিভার্সিটির তত্ত্বাবধানে স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে মাস্টার্স এবং ২০১১ সনে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্, ঢাকা থেকে এমফিল ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি দেশী-বিদেশী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিরাপত্তা, ভূ-রাজনীতি এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী কলাম ও বইয়ের লেখক হিসেবে অধিক পরিচিত। এ পর্যন্ত তার তেইশটি বহুল পঠিত বই প্রকাশিত হয়েছে। তা ছাড়া দেশী-বিদেশী ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনীতি এবং নির্বাচন বিষয়ে বিশ্লেষক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। ২০০৭ সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১২ সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ বছর তিনি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার রয়েছে। ২০০৮ সনের জাতীয় এবং স্থানীয় সরকারের পাঁচ হাজারের বেশি নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা।