ইতিহাস অতীতের নীরব সাক্ষী। ইতিহাস চির-মুখর। যুগ-যুগান্তর ধরে মানব-সভ্যতার চলমান জীবনধারাই ইতিহাস। সে চক্রতীর্থের পথে পথে ছড়িয়ে আছে কত শত ভাঙা-গড়ার অর্ধলুপ্ত অবশেষ—কত রক্তরঞ্জিত দৃশ্যপটের পরিবর্তন; কত নিশীথকালের দুঃস্বপ্ন-কাহিনি; কত উত্থান-পতন, কত চেষ্টার তরঙ্গ, কত সামাজিক বিবর্তন। . আজ যা বর্তমান, কালই তা অতীত। ইতিহাস ত্রি-কাল-সূত্রে গ্রথিত। ইতিহাস তো অতীতেরই সত্য-স্বরূপ উদ্ঘাটন—এক অনন্ত মানব-জীবনপ্রবাহের অনির্বাণ দীপ-শিখা। ইতিহাস অতীতের অভিজ্ঞতা, বর্তমানের সাধনা, ভবিষ্যতের ইঙ্গিত। . ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে আমরা মানবসমাজের শুরু থেকে এর যাবতীয় কর্মকাণ্ড, চিন্তা-চেতনা ও জীবনযাত্রার অগ্রগতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারি। এজন্যই ইতিহাসকে বলা হয় জাতির দর্পণ। . এ ইতিহাসের সাথে সম্পর্কসূত্রের ধারাবাহিকতায় আমাদের এবারের প্রকাশনা—সেলজুক সাম্রাজ্যের ইতিহাস। ইসলামি ইতিহাসে সেলজুকদের রয়েছে এক স্মরণীয় অধ্যায়। প্রায় ২০০ বছর ধরে তারা অর্ধ পৃথিবী শাসন করেছে অত্যন্ত প্রতাপ, বিক্রম ও ভাঙনের চড়াই-উৎরাই নিয়ে। মুসলিম-ইতিহাস অধ্যয়নে সেলজুক সাম্রাজ্যের ইতিহাসের রয়েছে অন্যতম ভূমিকা। রক্তাক্ত ক্রুসেড যুদ্ধের ইতিহাসের অগ্রসেনানি ছিলেন এ সেলজুকরা। সমৃদ্ধ সেলজুক সাম্রাজ্যের সূচনা, স্থিরতা, ভাঙা-গড়া এবং নানা চড়াই-উৎরাই নিয়ে রচিত আখ্যান সেলজুক সাম্রাজ্যের ইতিহাস। . সমকালীন মুসলিম বিশ্বের সুপরিচিত ইতিহাসবিদ ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির বিশ্বস্ত কলমে উঠে এসেছে এই দীর্ঘ ইতিহাসের ফিরিস্তি। তার এই গ্রন্থনার বাংলা অনূদিত রূপ সেলজুক সাম্রাজ্যের ইতিহাস; যা পাঠককে পরিচিত করে দেবে মুসলিম-ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়ের সাথে।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০