মানুষের প্রথম ও সবচেয়ে বড় পরিচয় সে মানুষ। ধনী-গরিব, সাদা-কালো বা ধর্মের বিভেদ নিয়ে মানুষ পৃথিবীতে আসে না। এতে মানুষের হাতও নেই। তবুও আমাদের সমাজের চিত্র আলাদা। নিজেকে উপরে রাখার জন্য অন্যদেরকে ছোটো করে রাখার অপক্ষমতা দেখিয়ে চলে অজস্রজন। যা মিথ্যা নয়, দৃশ্যমান সত্য। শুধু অর্থ দিয়েই জাত ভাগ হয় না আমাদের সমাজে। নারী-পুরুষের বিভেদ, ধর্মের বিভেদ, পেশার বিভেদ আরো কত কত বিভেদে জাতবৈষম্যের দেখা পাই আমরা প্রতিনিয়ত। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে দুর্বলের উপর অনাচার-অবিচার চলে সবলের। মানুষ হিসেবে মানুষের যে অধিকার, সেখানেও অধিকারহরণ চলে, যা অমানবিক। ধর্ম কোনো অমানবিকতার পক্ষেই না। তবুও কিছু মানুষের পথ থাকে বিকৃত। তারা মনে করতে থাকে, তারা সোজা পথে আছে। তাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে এসব অসামঞ্জস্য বোধ দেখিয়ে দেওয়ার মানুষও পাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে। অন্যায়কে পুঁজি করে এগিয়ে যাওয়া মানুষের মধ্যে আবার মুখোশের দেখাও মেলে। তারা নিজের গা বাঁচাতে শুদ্ধতার চাদর পেঁচিয়ে রাখে গায়ে। যে সফেদ চাদরের জন্য সেইসব মানুষের দিকে আঙুল তোলার সাহস পায় না কেউ। আবার কেউ কেউ পায়। কারো কারো দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তারাও একদিন এগিয়ে আসে সামনের দিকে। এমনসব দৃশ্যের দৃশ্যায়ন দেখানো হয়েছে 'জাত' উপন্যাসে৷ জাতবৈষম্য, মানুষের অবস্থান, অন্যায়, অভাব, পরিবার, বন্ধুত্ব, মানবিকতা, শুদ্ধতা, পাওয়া-না পাওয়া, অন্তরালের প্রেম, অভিমান, সম্পর্ক; এই বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে পুরো বইটিতে। সেইসাথে যুক্ত হয়েছে কিছুটা ভৌতিকতা, রহস্য, থ্রিল। সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই সবকিছুর মিশ্রণে তৈরি হওয়া একটি জীবনধারা দেখানো হয়েছে 'জাত' উপন্যাসে। সব শ্রেণির পাঠকের কাছেই বইটি ভালো লাগবে, এমনটা আশা করা যেতে পারে।