স্রোত যখন প্রবাহিত হয়, তখন সবরকম জল একসাথে নিয়েই এগোয়। নদীতটে দাঁড়িয়ে বোঝার উপায় নেই, স্রোতের কোন অংশ এসেছে কোন শাখানদী কিংবা উপনদী থেকে। কেননা সে তখন ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে আসা প্রবাহের মিলনে মিলেমিশে একাকার। গদ্য সাহিত্যকে যদি এমনই এক স্রোত বলে ধরে নিই, তাহলে কিছু ক্ষেত্রে যে কোনও লেখকের এই একাকার হয়ে ওঠবার সুযোগ থাকে বৈকি। ঔপন্যাসিক আহমেদ মুনির এমনই একজন লেখক যিনি তাঁর উপন্যাসসমূহের লাইনে লাইনে নতুন ধারার অভিব্যক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে চলেছেন। অভিব্যক্তি ছাড়া গদ্য সাহিত্যের একটি লাইনও কোনও প্রধান ভাষা বলে মনেই হয় না। উপন্যাসসমগ্রটি পাঁচটি রোমান্টিক ও একটি জীবনীভিত্তিক উপন্যাস দিয়ে সাজানো হয়েছে: ১. সাহসী হৃদয় ২. তোমার মাঝে হারিয়ে যাবো ৩. কী যে করি ৪. অনূঢ়া আমার শিশিরবিন্দু ৫. ইবোলা নদীর তীরে ৬. আমার সারাবেলা (জীবনীভিত্তিক উপন্যাস)। ইতোপূর্বে উপন্যাসগুলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পেয়েছিল। নিজের পাঠের অভিজ্ঞতা থেকে, সমগ্রটিতে স্থান পাওয়া উপন্যাসগুলোতে শব্দের বুননে টান টান উত্তেজনা এবং প্রতি বাক্যের অভিব্যক্তি শেষে; সমাপ্তিতে ফলাফল অবলোকনের দূর্নীবার ইচ্ছে অনুভব করেছি। ভিন্ন ভিন্ন স¦াদের উপন্যাসগুলোতে মানুষের চারিত্রিক গুনাবলী, এমনকি সমাজ ও সংসারের অসঙ্গতিসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট পোক্তভাবে স্থান করে নিয়েছে। প্রতিটি উপন্যাসে প্রণয়ঘটিত ব্যাপারগুলো সুন্দরভাবে দৃশ্যমান করা হয়েছে কেননা ‘প্রণয়’ জগতের চিরস্থায়ী কলা যা মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। রোমাঞ্চকর এই উপন্যাসসমগ্রে মানুষের চরিত্রগত ও কল্পনাপ্রসূত ঘটনাগুলিও এতটাই বাস্তবতায় ভরা যে, গ্রন্থটি পাঠে যে কোনও সাহিত্যপ্রেমীর মন আপ্লুত হতে বাধ্য। অন্যদিকে, ইতিহাসভিত্তিক ঘটনাগুলি যতদূর সম্ভব অবিকৃত রেখেই লেখা হয়েছে। বর্তমান অত্যাধুনিক ইন্টারনেটের যুগেও, বাস্তবিক ও কল্পনাপ্রসূত ঘটনার সুপ্ত নির্যাসে রচিত রচনাগুলির নিবিড় স্পর্শ যে কোনও পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে; তদুপরি কাহিনিসমূহ ও বিষয় বৈচিত্র্য কিছুক্ষণের জন্য হলেও; উত্তেজনায় এবং চমকপ্রদ সমাপ্তিতে পাঠকদের ভিন্ন এক জগতে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে বলে মনে করি। ডা. জয়প্রকাশ সরকার ঢাকা, বাংলাদেশ। (মোটিভেটর লেখক, প্রাবন্ধিক ও চিকিৎসক)