১৯৭১-এর ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় এবং একই বছর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় লাভের মধ্য দিয়ে এর পরিসমাপ্তি ঘটে। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের মধ্যরাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা বাঙালি হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তেলিয়াপাড়ায় অবস্থিত দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদর দপ্তরে একত্রিত হন। ১০ এপ্রিল ১৯৭১, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী, ‘জেড ফোর্স’, ‘এস ফোর্স’, ‘কে ফোর্স’, নৌবাহিনী ইত্যাদি। ১৯৭১-এর নভেম্বরে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ড গঠিত হয়। পরিশেষে আসে বিজয়। বাংলাদেশ: ১৯৭১’ গ্রন্থটির মূল উপজীব্য বাংলাদেশের ইতিহাস (এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর ১৯৭১)। একদিকে পাকিস্তানের আগ্রাসন, আর অন্যদিকে মুক্তিরণ অভিযান ও রণাঙ্গন’-এর ধারাবাহিক ইতিহাস। একদিকে সুশৃঙ্খল ও রণকৌশলে বিশারদ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত নিয়মতান্ত্রিক সুবদ্ধ পাকবাহিনী, আর অন্যদিকে হঠাৎ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রবিহীন এলোমেলোভাবে গড়ে ওঠা প্রশিক্ষণহীন একদল বাঙালি যুবক নিয়ে গঠিত প্রতিরোধ বাহিনী তথা মুক্তিবাহিনী । বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা, গবেষণা-তথ্য ও সহজপাঠ্যের মাধ্যমে এই সময়ের ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে ‘জয় বাংলা ও বাংলাদেশ’, ‘বিশ্ববাসী ও বিশ্বশক্তি’ ও চূড়ান্ত অভিযান, বিজয়’ শিরোনামে। স্থান-কাল-দেশের পরিপ্রেক্ষিতে, আব্দুর রউফ চৌধুরীর সমকালীন ইতিহাসের ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা ও গবেষণার ক্ষেত্রে তাঁর পারঙ্গমতা প্রশ্নাতীত। তাঁর অভিজ্ঞতা, সংস্কার-রুচিপ্রবণতা, তথ্য সংগ্রহ ও বিচার-বিশ্লেষণ-ব্যাখ্যা বাংলাদেশ: ১৯৭১’ গ্রন্থটির মূল্য ও মর্যাদাকে অন্যস্তরে উন্নীত করেছে। আর তাই এই গ্রন্থে ঐতিহাসিক মূল্যায়ন হয়ে ওঠেনি কোনো বিতর্কিত অপব্যাখ্যা। এখানেই বাংলাদেশ: ১৯৭১’ গ্রন্থের অভিনবত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব।
জন্ম : ১লা মার্চ ১৯২৯। মুকিমপুর গ্রাম, হবিগঞ্জ। মৃত্যু : ২৩ ফেব্র“য়ারি ১৯৯৬। স্কাউট ভবন, হবিগঞ্জ সদর। হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে বি.এ শেষ বর্ষ সমাপ্তির পূর্বেই আউশকান্দি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে সপরিবারে পাকিস্তানে বসবাস শুরু। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে বিমান বাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নিয়ে সপরিবারে দেশে প্রত্যাবর্তন। ১০ জানুয়ারি ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে পৌঁছানো ও পরে ব্রিটিশ সরকারের এরোপ্লেন গবেষণা কেন্দ্রে স্পেশাল গ্রেডের চাকরিতে যোগদান। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্রমাগত পেশা বদল। ম্যানেজার, ইলেকট্রিক, মিস্টি, ফিটার। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ থেকেই তিনি তাঁর বিচিত্র জীবনের অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখতে শুরু করেন। আবদুর রউফ চৌধুরীর প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত অসংখ্য উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, সাহিত্য ও রচনাসম্ভার বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।