‘সিয়ারু আ’লামীন নুবালা’ ইমাম যাহাবী রাহেমাহুল্লাহ রচিত মুসলিম মনীষীদের জীবনীর বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ। আরবী ভাষায় পঁচিশ খণ্ডে প্রকাশিত এই গ্রন্থে ৫৯২৫টি জীবনী রয়েছে। সৌদি আরবের শাইখ মুহাম্মাদ মুসা আশ-শরীফ এ দীর্ঘ কিতাবকে সাধারণ পাঠকের কাছে মাত্র চার খণ্ডে পেশ করেছেন, যেখানে ৯৯৩টি জীবনী স্থান পেয়েছে । যাদের জীবনী থেকে শিক্ষণীয় কিছু পাওয়া গেছে, তাদেরকেই তিনি অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সংক্ষেপিত সংস্করণের নাম দিয়েছেন, ‘নুযহাতুল ফুদালা’। মূল বইটিতে চার খলীফার জীবনী নেই, তাই ইমাম যাহাবীর ‘তারীখুল ইসলাম’ গ্রন্থ থেকে সেটুকু নিয়েছেন। তারপর সাহাবীদের থেকে শুরু করে শেষ নাগাদ এসেছেন। সিয়ার গ্রন্থে লেখক কেবল ব্যক্তির জীবনী-ই উল্লেখ করেন নি; বরং প্রয়োজন মনে করলে তার প্রতি ইনসাফ প্রকাশের জন্য নিজের মন্তব্য লিখেছেন। ইতিহাসের অধিকাংশ ঘটনা উল্লেখ করে সেখানেও পর্যালোচনামূলক বক্তব্য রেখেছেন। এ কারণে গ্রন্থ থেকে আলোকিত দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায়, যা থেকে বর্তমান ইসলামী জাগরণে উপকৃত হওয়া সম্ভব। এ বইটিতে সুবিস্তৃত জীবনী আছে, সাথে আছে সুচিন্তিত ধারাবাহিক ঐতিহাসিক বর্ণনা, যেগুলো জীবনীর মাঝে মাঝে প্রবিষ্ট। বিশেষ করে খলীফা, রাজা ও আমীরদের জীবনী। ‘সিয়ার’ গ্রন্থটি মানুষের চোখে যারা সম্মানিত এমন অনেকের জীবনী অন্তর্ভুক্ত করেছে, যদিও শরয়ী দৃষ্টিতে তারা সম্মানিত নয়। তাই বইটিতে কোনো নির্দিষ্ট ফিকহী মাযহাব, খলীফা, রাজা, আমীর, কবি, নাহুবিদ, সাহিত্যিক, যোদ্ধা, বীর সেনাপতি, চিকিৎসক, দার্শনিক, পেশাজীবীর মাঝে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এদের সকলকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বলতে গেলে ইসলামী রাষ্ট্রের সকল জনপদের ঘটনা এটি শামিল করেছে। তবে এটা সত্য যে, মুহাদ্দিসদের জীবনী অন্য সকলের চেয়ে বেশি আছে। এর কারণ, যাহাবী ছিলেন হাদীসের হাফেয ও এ শাস্ত্রে পণ্ডিত, তিনি এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতেন। তবে প্রথম কয়েক যুগের মুহাদ্দিসরা একই সাথে ছিলেন ফকীহ, মুজাহিদ, সাহিত্যিক ও নাহুবিদসহ আরও নানান গুণে গুণান্বিত। আল্লাহ তাদেরকে রহম করুন। অনুবাদক আব্দুল্লাহ মজুমদার তার ভূমিকায় লিখেছেন, ”বিশ্বাস করুন ভাই-বোনেরা, বইটি এতোই অসাধারণ, আমি বলে বুঝাতে পারবো না, কী রয়েছে এতে! যদি আপনারা পড়ে না দেখেন। বইটির বেশ কিছু পাতা আমাকে ভাবিয়েছে, কিছু পাতা আমার চোখে পানি এনেছে, কিছু জীবনীর সাথে নিজের জীবনকে তুলনা করে আফসোস করেছি, কতোই না পিছিয়ে আছি আমরা। আমাদের আদর্শ, আমার কাছে যারা হিরো, তাদের জীবনাচরণ অনুসরণে কতোই না পিছিয়ে। আমরা কি তাদের নাগাল পাবো? তাদের মতো আমরাও কি আল্লাহর কাছে কবুল হবো? আল্লাহ ভালো জানেন।