লেখক পরিচিতি লেখক, কবি, সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক ও অনুবাদক। বর্তমানে অনুবাদ কর্মই তাঁর একমাত্র পেশা এবং উপন্যাস রচনায়ও মনোনিবেশ করেছেন।
ফ্ল্যাপে লিখা কথা এই কাহিনী কাল্পনিক নয়, তবে একমাত্র পলা ছাড়া পাত্রপাত্রীর নাম কাল্পনিক হলেও এরকম অনেক রুমানা ও রাসেল রয়েছে আমাদের চারপাশে। হুসনা বানু, ডালিয়া আর তহুরা বানুদেরও অভাব নেই। এই কাহিনীর পাত্রপাত্রীর মতো ওদেরও থলেতে রয়েছে একাধিক বেড়াল। তারা নিঃশব্দে আসে যায়, আড়ালে-আবডালে গা ঘষাঘষি করে, শরীর হাতড়ায়, ঘটাঘাঁটি করে এবং সশব্দে পাড় ভাঙে। ঝরাপাতার শব্দ ছাপিয়ে অন্ধকারে রাতেও তাদের ফিসফিসানি আর শরীরের কোলাহল প্রান্তরের বাতাসে মিশে যায়। কেউ কেউ কখনও কখনও এই শব্দে সচকিত হয়ে ওঠে, নিন্দায় জর্জরিত করে তাকে প্রায় অস্পৃশ্য করে তোলে। আবার তারাই অন্ধকারে হামাগুড়ি দিয়ে এগোয়, মিশে যায় অন্যের শরীরের ছায়ায়। আপন ও পরের পার্থক্য ভুলে তারা ঘ্রাণ নেয়, স্বাদ নেয়।
অবদমিত এই সমাজে অবদমনের প্রথম পাঠ রাসেলকেও শেখানো হয়েছিল, কিন্তু সে তো মেনে চলেনি, তবে আড়াল খুঁজছে। আড়াল খুঁজতে খুঁজতে দেখেছে আড়ালে আরো অনেকেই আছে। বড়ো হতে হতে দেখেছে তারা সংখ্যায় অনেক- আত্মীয়, অনাত্মীয়। আরো দেখেছে আড়াল সম্পর্কে গিলে খায়, বৈধতা গিলে খায়, সমাজের মুখে পেচ্ছাব করে পশ্চাৎদেশ উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। কারণ সমাজ না চাইলেও মানুষের শরীর ও মন বসে থাকে না। সে ঘ্রাণ নিতে চায়, স্বাদ নিতে চায়। আড়ালে ও আবডালে তাই শরীর, মন ও মস্তিষ্কের আচরণের এই আনন্দে সে বুঝে ফেলে ওটা একটা খেলামাত্র। এই খেলায় কেউ কিছু হারায় না। আরো বুঝে ফেলে, এই খেলা হচ্ছে জীবনের অপরিহার্য সৌন্দর্য, এ থেকে মানুষের মুক্তি নেই। তখন আমরা শুনি পুরুষের সেই উচ্চারণ : ‘তুমি তো তুমি নও। তোমার গর্ভে ঈশ্বরের ঘ্রাণ। আমি প্রথম এই ঘ্রাণ পেয়েছিলাম মায়ের গর্ভে। সেই ঈশ্বরের ঘ্রাণে উন্মত্ত হয়ে তোমার গর্ভ ছুঁয়ে দেখার জন্য তোমাকে আজ তছনছ করে ফেলেছি।’
মােস্তফা মীর মূলত কবি। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে যারা প্রথম কবিতা লিখতে শুরু করেন এবং সত্তর দশকে বাংলা কবিতাকে যারা এদেশে জনপ্রিয় করে তােলেন মােস্তফা মীর তাদের অন্যতম। তাঁর জন্ম ১৯৫২ সালে, রাজবাড়ী জেলার বড়লক্ষীপুর গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তিনি মাষ্টার্স করেছেন ১৯৭৬ সালে। কর্মজীবনে একাধিকবার পেশা বদল করেছেন এবং একটি বেসরকারি সংস্থায় ১৮ বছর যুক্ত ছিলেন সম্পাদনা কর্মের সঙ্গে। আজন্ম উদাসীন ও প্রচার বিমুখ এই কবির কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা মাত্র পাঁচটি। পুরো আশির দশকে তিনি কোন লেখালিখিই করেননি। নব্বই দশকের শুরুতে এসে হঠাৎ করেই লেখেন উপন্যাস 'দানববংশ।' মৌলবাদীরা মামলা ঠুকলেও তা ধােপে টেকেনি। তবে গদ্যচর্চার এই ধারাবাহিকতায় লেখেন আরও তিনটি উপন্যাস, ‘ঈশ্বরের ঘ্রান’, ‘কুকুরকুঞ্জ’ এবং তােমাকে চাই'। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই তিনি উপন্যাস রচনার পাশাপাশি অনুবাদ কর্মে হাত দেন এবং গদ্য ও পদ্য মিলে তাঁর অনুবাদ গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ত্রিশ এর অধিক। বর্তমানে অনুবাদ কর্মই তার একমাত্র পেশা এবং তিনি উপন্যাস রচনায়ও মনােনিবেশ করেছেন । তবে প্রায় সময়ই তিনি অসুস্থ থাকেন। কারণ গত এগার বছর যাবৎ তিনি লিভারের অসুখে ভুগছেন। গত বছর প্রকাশিত হয়েছে তার গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘মিশরীয় পুরাণ'। মােস্তফা মীরের সবচেয়ে আলােচিত গ্রন্থ হচ্ছে ‘আদম ইতিহাসের প্রথম চরিত্র।