বাঙালি বীরের জাতি। এ জাতির সাহসী সন্তানেরা মায়ের মুখের ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য লড়াই করতে জানে, মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য প্রাণ বাজি রেখে যুদ্ধ করতে জানে, তারা জানে যুদ্ধশেষে ঘরে ঘরে বিজয় পতাকা উড়িয়ে দিতে। এ সবের প্রমাণ আছে আমাদের গৌরবময় ইতিহাসে। কিন্তু সেই ইতিহাসের দুয়ারে কতজনই বা কড়া নাড়ে। শিশু-কিশাের পাঠকেরা চায় গল্প শুনতে। গল্প শােনার আগ্রহের কোনাে সীমা-পরিসীমা নেই তাদের। তারা ফুল পাখি প্রজাপতির গল্প শােনে, তারা বাড়ির গল্প ইশকুলের গল্প দেশের গল্প শােনে, ইতিহাসের গল্প শুনতেও আপত্তি নেই তাদের। যুদ্ধজয়ের গল্প মানে তাে বীরত্বের গল্প। বীরত্বের গল্পে থাকে রােমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার বর্ণনা, রােমাঞ্চপ্রিয় ক্ষুদে পাঠকেরা সেই গল্প শুনতে পড়তে পড়তে নিজেকেও বীর পুরুষ ভাবতে শেখে। তারাই হবে আগামী দিনে এ দেশের সাহসী নাগরিক। দেশের দুর্দিনে নিশ্চয় তারা এগিয়ে আসবে বীরত্বের সঙ্গে। এমন প্রত্যাশা সামনে রেখেই ছােটদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের গল্প লিখে চলেছেন কথাশিল্পী রফিকুর রশীদ। এ সব কিশাের গল্প ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন গল্পগ্রন্থে । তারই মধ্যে থেকে বাছাই করে প্রতিশ্রুতিশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এবারে প্রকাশ করছে। “মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত কিশােরগল্প”।
রফিকুর রশীদ। জন্ম ১৯৫৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, মেহেরপুর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৮৩ সালে সিলেটের এক চা-বাগানে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। মন টেকে না সেখানে। যােগ দেন কলেজ। শিক্ষকতায়। দীর্ঘ ৩৩ বছর শিক্ষকতা শেষে মেহেরপুরের গাংনী কলেজ থেকে তিনি সম্প্রতি অবসর গ্রহণ করেন। নিভৃতে কাব্যচর্চা দিয়ে শুরু হলেও সত্তর দশকের শেষভাগে পত্র-পত্রিকায় গল্প লিখেই তাঁর আত্মপ্রকাশ সাহিত্যজগতে। দেশের উল্লেখযােগ্য প্রায় সব কাগজে বিরামহীন লিখে চলেছেন গল্প আর গল্প, সঙ্গে উপন্যাসও। ছােট-বড় সকলের জন্যে। নির্মোহ চরিত্র চিত্রণ এবং বর্ণনার বিশ্বস্ততাই কথাশিল্পী হিসেবে তাকে এনে দিয়েছে বিশিষ্টতা। ছােটদের জন্য লেখা গল্প এবং উপন্যাসে রফিকুর রশীদ এনেছেন বিপুল বিষয় বৈচিত্র্য। প্রিয় প্রসঙ্গ মুক্তিযুদ্ধ তাে আছেই, বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও কৌতূহলে ভরা বিচিত্র বর্ণে বর্ণিল ছােটদের নিজস্ব ভুবনের আলােকিত উপস্থাপন ঘটে চলেছে তার লেখা শিশু ও কিশাের সাহিত্যে। স্বপ্নজয়ের কথাশিল্পী রফিকুর রশীদ এরই মাঝে অর্জন করেছেন এম. নূরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, অধ্যাপক মােহাম্মদ খালেদ শিশু সাহিত্য পুরস্কার, চন্দ্রাবতী একাডেমি শিশু ও সাহিত্য সম্মাননা, কাজী কাদের নওয়াজ জন্মশতবর্ষ সম্মাননা, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অরণি সাহিত্য পুরস্কার, কাঙাল হরিনাথ পদক ও পুরস্কার, বগুড়া লেখকচক্র স্বীকৃতি ও সম্মাননা, সাতক্ষীরা সাহিত্য একাডেমি সম্মাননা, সিকান্দার আবু জাফর সাহিত্য পুরস্কার, দ্বিজেন্দ্র পুরস্কার (ভরত) প্রভৃতি।