"মুক্তিযুদ্ধে শেরপুর" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ ১৯৭১। ভয়াবহ, দুঃসহ, ধ্বংস এবং সৃষ্টির সময়। উত্থান অথবা পতনের অনিশ্চিত অন্ধকারের অনিকেত যাত্রা। আমার তখন ঘন ঘন আয়না দেখার বয়স। ফেউসা ফেউসা দাড়ি আর গোঁফের বাহারি উপস্থিতি। যৌবনের গরমে হুদাই ফালমারি। সােনার বাংলা শ্মশান কেন? শেখ সাবের কাছে ক্ষমতা পাকিরা দেয় না কেন? এসব শ্লোগানে মাতওয়ারার আচানক সময়। মাত্র একটা, একটা মাত্র ভাষণে যুদ্ধ কী কইরা লাইগা যাইতে পারে তার নগদ প্রমাণ ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। ভাষণ যে একটা জাতিকে শাসন করতে পারে আর সেই নেতা জাতির জনকের আসনে বসতে পারে তার নগদানগদ প্রমাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আসলে ৭ই মার্চের ভাষণেই উজ্জীবিত হয়ে অনুপ্রাণিত হয়ে সারাদেশের মানুষ বিশেষত যুবক সম্প্রদায় মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। গােটা বাংলাদেশের সাথে তকালীন মহকুমা শেরপুরের জনগণ প্রস্তুত ছিলেন। সেই প্রস্তুতির এবং সম্মুখ যুদ্ধের মর্মান্তিক কিছু কাহিনি কিছু ঘটনা এই গ্রন্থটির মধ্যে সন্নিবেশিত হয়েছে। লেখক গবেষক নন। তবে তথ্য সংগ্রহ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনেক প্রাথমিক পর্যায়ের মূল্যায়ন দলিল সংগ্রহ করেছেন। শহীদ মুক্তিযােদ্ধাদের তালিকাসহ অন্যান্য শহীদেরও তালিকা সংযুক্ত করা আছে। বিস্তারিত তথ্য সূত্রের অভাবের কারণে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে। মুক্তিযুদ্ধ যে জনযুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছিল তার প্রমাণ এই গ্রন্থ পাঠে অতি সহজেই বােঝা যায়। সাধারণ জনগণের সহযােগিতা ব্যতীত মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করা চিন্তাই করা যায় না। আমাদের একাত্তরের যুদ্ধ ছিল প্রকৃত পক্ষেই একটি অসাধারণ সাহসী জনযুদ্ধ।
আবদুর রহমান তালুকদার বীর মুক্তিযােদ্ধা। জন্ম ১৯৪৮ সালে নালিতাবাড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী কাকরকান্দি ইউনিয়নের শিক্ষা দীক্ষায় অগ্রসর ও বর্ধিষ্ণু গ্রাম বরুয়াজানীতে। ময়মনসিংহ জেলা শহরের নাসিরাবাদ কলেজ থেকে স্নাতক অর্জন শেষে মুক্তিযুদ্ধে ১১নং সেক্টরে অংশ গ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি প্রথমে বরুয়াজানী হাইস্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যােগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি সরকারি চাকরিতে যােগদান করেন। চাকরিজীবনে তিনি সাহিত্য সাধনায় নিজেকে নিয়ােজিত রাখেন। পাশাপাশি বিভিন্ন সাময়িকীতে গল্প ও ছড়া লিখে একজন গল্পকার ও গীতিকার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।। সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে পরিদর্শক পদে ৩২ বছর চাকরি শেষে বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন। তাঁর লেখা গ্রন্থ মুক্তিযুদ্ধে নালিতাবাড়ি ইতােমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। আর একটি যুদ্ধ চাই নামে কবিতাগ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায়। তিনি চার সন্তানের জনক। স্ত্রী সিদ্দিকা আক্তার জাহান রেবা।