এখন যে হারে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গদ্যপদ্যের বইই প্রকাশের সুনামি চলছে, তা কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তেমনটি ছিলোনা। সামরিক শাসনের ভয়ে লেখাতো দূরে থাক নামটি পর্যন্ত গোপনে উচ্চারণ করতো। সেই রকম সময় কবি নির্মলেন্দু গুণ প্রথম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রথম কবিতা লিখলেন ও সৈয়দ ইকবাল প্রথম গল্প লিখলেন ‘একদিন বঙ্গবন্ধু’। [হত্যার দিন ১৫ আগস্ট প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ৩২নম্বর ধানমন্ডির গেইটে গিয়ে ধরা পড়ে নিগৃহীত হয়েছিলেন। সেই বাস্তব অভিজ্ঞতার ফসলই এই গল্প।] এই ঘটনার আগে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে লেখকের মুখোমুখি সাক্ষাত হয়েছিলো সত্তরের ভয়াবহ ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পর হাতিয়া দ্বীপে। অতি তরুণ লেখক পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র শাখার জনা বিশেকের সঙ্গে রিলিফ কাজে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু দলবল সহ আওয়ামী পতাকাবাহী বড় লঞ্চে এসেছিলেন বেঁচে থাকা মানুষের কাছে। পাকিস্তানী সরকার পক্ষের যেহেতু কেউ আসেনি। বঙ্গবন্ধু আগমণের সরু মেঠো পথের দুই ধারে দাঁড়িয়ে লেখক ও অন্য কমরেডদের গগনভেদী শ্লোগান ‘জয় সর্বহারা’। বঙ্গবন্ধু কাছে এসে থেমে পড়লেন। হাতের পাইপটি ঠোটে চেপে হাল্কা ধোঁয়া ছেড়ে অতি তরুণ লেখকের বাতাসে উড়ন্ত চুল গুছিয়ে নিজের হাতে হাত নিয়ে উঁচিয়ে ধরে বললেন- জয় বাংলা নয়! বললেন ‘জয় সর্বহারা’। এই স্পর্শ নিয়েই বইটি। সঙ্গে অন্যান্য গল্পও রয়েছে।
Syed Iqbal- শিল্পী না লেখক বোঝা মুস্কিল। শয়ে-শয়ে ছবির প্রচ্ছদ, ছোটদের বইয়ের অলঙ্করণ, নাটকে অসংখ্য পোষ্টার ডিজাইন, কার্টুন করে চলেছেন দেশে বিদেশে। বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র দিয়েছে প্রচ্ছদ ডিজাইন ও অলঙ্করণের জন্য শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দুইবার। বিশ্বময় নামী শহরগুলোতে ব্যক্তিগত ও গ্যালারিতে সংগৃহীত আছে তার পেইন্টিংস। অনলাইন পত্রিকা দি বেঙ্গলি চাইমসে নিয়মিত তিন বছর কার্টুন আঁকছেন। দেশের স্বনামধন্য বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘বিটপী’তে জীবনের বেশিরভাগ সময় ছিলেন সিনিয়র আর্ট ডিরেক্টর। এতকিছু মেলালে তাঁকে হয়তো শিল্পী বলা যায়। অন্যদিকে ১৭টি গল্প-উপন্যাস ও ছোটদের জন্য লেখা তাঁর প্রকাশিত। কুশল আর মৃত্যুবুড়ো কিশোরদের জন্য এক মাইলফলক সৃষ্টি। খাগড়াছড়ির কংজুরী পেয়েছে অগ্রণী ব্যাংক ও শিশু একাডেমীর পুরস্কার। বঙ্গবন্ধু হত্যা নিয়ে তিনিই প্রথম গল্প লেখেন ‘একদিন বঙ্গবন্ধু’। ভালোবাসার পাঁচ পা, ঘুমচ্ছো লস আঞ্জেলিস, বিন্দুময় টরনোট, অগ্নীলার বাবার হাড্ডিগুড্ডি, পক্ষীজীবন, আমিতো যীশু নই তাঁর বহুল মুদ্রিত বই। দেশে থাকেন কিংবা বিদেশে তিনি লেখেন, তাঁকে হয়তো লেখাক বলা যায়। ২০১২ বইমেলায় তাঁর তিনটি উপন্যাস তেপান্তরে তিন বৃক্ষ, এসেছিলে তবু আসনি, লাভ এন ওয়াই ও গ্রল্পগ্রন্থ প্রেম চায় জিবরানের ডানা প্রকাশিত হয়েছে।