ভালোবাসা কখনো বলে কয়ে আসে না। এই আসে, এই যায় এমন। ভালোবাসা কখনো মেঘের মতো, কখনো বৃষ্টির মতো, কখনো বা রোদের মতো। এই মেঘ করেছে, এই বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে সব একাকার করে ফেলেছে আবার মেঘ, বৃষ্টি সব শেষে রোদ নেমে আসার মতোই ভালোবাসা আসে। শুধু যে মেঘ, বৃষ্টি কিংবা রোদের মতোই যে ভালোবাসা আসে এমন নয়, কখনো কখনো ঝড়ের মতোও আসে। ভেঙেচুরে ভেতরটা একেবারে তছনছ করে দিয়ে যায়। কেউ একদম পুরোপুরি ভেঙে যায়, কেউ বা দাঁড়ায় নতুন কোনো ছায়ায় বেড়ে উঠার প্রবল আকাক্সক্ষায়। এভাবে ভেঙে যেতে যেতে, দাঁড়াতে দাঁড়াতে, বেড়ে উঠতে উঠতে মানুষ বুঝতে পারে যে ভালোবাসা কেবল আনন্দই নয়, বেদনার নামও ভালোবাসা। ভালোবাসার এই বেদনার কথা কাউকে জানাতে নেই, দেখাতে নেই, বুঝাতে নেই, যতœ করে কেবল তা রেখে দিতে হয় বুকের মাঝে। কারণ নিজের বলে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে দিন শেষে এই বেদনাই থাকে। বেদনা যে কেবল কাঁদায়ই তা নয়, বেদনা কখনো কখনো হাসায়ও, ডোবায় আবার ভাসায়ও। মানুষের যখন আর কিছু করার থাকে না তখন এভাবেই জীবনের সকাল-সন্ধ্যাগুলো বেদনার সাথে কাটায়, কাটানো যায়। বেদনা যে কেবল চোখের জলই ফেলে তাই-ই নয়। কিছু কিছু বেদনা এতটাই গোপন যে চোখের জল না ফেলে মনের জল ফেলে। যা কেউ দেখে না, কখনোই দেখতে পায় না। আবার হয়তো কখনো কোনো এক ভালোবাসায় এই জল মুছে নেয়। এই জল অবশ্য রুমাল দিয়ে মোছা যায় না। রুমাল দিয়ে কেবল চোখের জলই মোছা যায়, মনের জল মন দিয়েই মুছতে হয়। যতদিন অবধি না মানুষ মনের জল মোছার মতো মন পায় ততদিন অবধি মনে জল থাকেই। হয়তো এই জল নিয়েই এক জীবন কেটে যায়, মোছা হয়ে উঠে না আর কখনোই।
আরিফ খন্দকার। বুকের ভেতর অজস্র গল্প বয়ে বেড়ান। মানুষের গল্প, জীবনের গল্প। সেইসব গল্পই তিনি বলে যেতে চান কবিতায়, গল্পে, উপন্যাসে। তাইতো একের পর এক লিখে চলছেন। আমৃত্যু লিখে যেতে চান। তাঁর লেখা যখন বই আকারে প্রকাশ হয় তখন তাঁর কাছে মনে হয় এটা একটা বই-ই না। আসলে এটা একটা মানুষ, এটা একটা জীবন। এভাবেই তিনি মানুষ, জীবন তৈরি করে চলছেন ২০১৫ সাল থেকে। ২০১৫ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশ হয় তাঁর প্রথম বই। এখন পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৬। দুটো কাব্যগ্রন্থ ও চৌদ্দটি উপন্যাস। তাঁর কাছে এই ষোলোটিকে বই মনে হয় না। মনে হয় মানুষ, মনে হয় জীবন। এই ষোলোজন মানুষ পাঠকের দুয়ারে ঘুরে ঘুরে তারা তাদের জীবনের গল্প শুনায়। এভাবে আরো মানুষ তৈরি করায় ব্যস্ত তিনি শুধুমাত্র তাদের জীবনের গল্প পাঠকরা শুনবে বলে। মানুষ ও জীবন তৈরি করার এই মানুষটির জন্ম ২৩ আগস্ট ১৯৯৭ সালে নরসিংদী শহরে। খুব ছোটবেলা থেকেই তাঁর বই পড়া শুরু। বই পড়তে পড়তে যখন তাঁর মনে হলো তাঁর ভেতর নদীর জলের মতো তিরতির করে গল্প বয়ে বড়াতে শুরু করছে তখনই তিনি লিখতে শুরু করেন। শুরুটা ছোটগল্প দিয়ে হলেও কবিতা ও উপন্যাস লিখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাঁর কাছে মনে হয় কবিতা ও উপন্যাসে মানুষের জীবন যতটা গভীরভাবে অনুধাবন করা যায় ততটা গভীরভাবে আর কোনোকিছুতে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। কারণ কবিতা ও উপন্যাসই মানুষের কথা বলে, জীবনের কথা বলে। বলতে বলতে আবার মানুষ হয়, জীবনও হয়। এই মানুষ আর এই জীবন দেখতেই খুব পছন্দ করেন তিনি। তাইতো সবকিছু থাকা সত্ত্বেও একা, নিঃসঙ্গ হয়ে আছেন লেখা নিয়ে। অবশ্য এটাকে একা, নিঃসঙ্গও বলা যায় না, বলা যায় তিনি মানুষের ভিড়ে জীবনের গল্প বলায় ব্যস্ত।