"ইতিহাস কথা কয়" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পরে উপমহাদেশের মুসলিম জাতির ইতিহাস যুগ পরম্পরায় এক বিরাট বিপর্যয়েরই ইতিহাস। ইংরেজ শাসনের শুরু থেকেই ইংরেজ বিতাড়নের সহিংস পথে প্রথম এগিয়ে এসেছিল মুসলমানরাই। ফকির নেতা মজনু শাহর সময় থেকে রংপুরের কৃষক নেতা নূরুলদিন, হাজী শরীয়তুল্লাহ, দুদু মিয়া প্রমূখের মাধ্যমে উনিশ শতকের তিতুমীর ও সিপাহী বিদ্রোহের প্রায় সকল নেতাই ছিলেন মুসলমান। মুসলমানরা যুদ্ধ করেছিলেন গোটা হিন্দুস্তানের জন্যই। মুসলমানরা ভাবতেন ও প্রচারও করতেন যে, ভারত হিন্দু-মুসলমান সকলের জন্মভূমি এবং ইংরেজরা হিন্দু-মুসলমান উভয়েরই শত্রু। এসব নিয়ে অনেক ইতিহাস লেখা হয়েছে।
তবে ইংরেজ আগমনের পর থেকে উপমহাদেশের যেসব ইতিহাস লেখা হয়েছে সেগুলি অনেকক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেনি। তাই, উদারমনের অধিকারী কোনো লোকের আত্মজীবনী কিংবা স্মৃতিকথা যখন আমরা পড়ি, তখনই বিস্মিত হয়ে এমন কিছু বিষয় আমরা আবিষ্কার করে ধন্য হই, যেগুলো সম্পর্কে আমাদের জানাশোনা ছিল অস্পষ্ট, এমনকি ভুল। সে দৃষ্টিকোণ থেকে ‘ইতিহাস কথা কয়’ এমনই এক বিরল ও স্মরণীয় গ্রন্থ, যা বহু অস্পষ্ট ঘটনাকে স্পষ্ট করে, বহু বিতর্কিত বিষয়কে অভিজ্ঞতার আলোকে আলোকিত করে তোলে। বিস্মৃত ও চাপা পড়া ইতিহাসের বিশ^স্ত ও নিরপেক্ষ উপস্থাপনায় এ গ্রন্থটি মুসলিম জাতীয় চেতনায় উজ্জীবিত এক উজ্জ্বল কীর্তি হয়ে উঠেছে এবং এ কারণে গ্রন্থটির মূল্য অপরিসীম।
১৯০৮ সালের ৬ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার (বর্তমানে উত্তর চব্বিশ পরগণা) বসিরহাট মহকুমার হাড়োয়া থানার শালিপুর গ্রামে মোহাম্মদ মোদাব্বের জন্মগ্রহণ করেন। স্যার আর. এন. মুখার্জী স্কুল থেকে ১৯২২ সালে মেট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তাঁর চাচা মওলবী মুজীবুর রহমান ছিলেন সাংবাদিক এবং “দি মুসলমান” পত্রিকার সম্পাদক। তাঁরই কাছে পাঠ্যাবস্থায় মোদাব্বের সাংবাদিকতা শেখেন। তারপর নেতাজী সুভাষ বসুর ‘ডেইলি ফরওয়ার্ড’ পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৩৫-এর শেষের দিকে ‘সাপ্তাহিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় এবং ১৯৩৬-এ নিউজ এডিটর হয়ে যোগ দেন ‘দৈনিক আজাদ’-এ। পরে ‘দৈনিক ইত্তেহাদে’। ১৯৪৯ সালের আগস্ট মাসে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে আসেন এবং অর্ধসাপ্তাহিক “পাকিস্তান” নামে নিজের সম্পাদনায় একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। ’৬৫ সাল পর্যন্ত এই পত্রিকা চালিয়ে যান। চীন ও রাশিয়া ছাড়া তিনি পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই সফর করেছেন। ১৯৬৫ সালে তিনি শিশু-সাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান এবং ১৯৭৯ সালে তিনি সাংবাদিকতার জন্য একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৮৪ সালের ২১ এপ্রিল ৭৬ বছর বয়সে তিনি পরলোকগমন করেন।