আর্নিশাকে একটা সময় ভালোবাসতে বাসতে এই ভালোবাসাটাই অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসার মতো কঠিন কিছু পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই, তবুও এটা থেকে বের হয়ে আসা অসম্ভব নয়। সেদিনের সেই রাতের পর থেকে আমাকে দেখার অপেক্ষায় আর্নিশা যেমন অধীর আগ্রহে সন্ধ্যাতারা জ্বালিয়ে বসে থাকে , আমার অফিস থেকে ঘরে ফেরার পথের দিকে তাকিয়ে কেউ একজন সারাদিনের যোগান খেটে সেজেগুজে বসে থাকে।হিয়া আমার এবং আর্নিশার অতীত সম্পর্কে না জানলেও আর্নিশার দেওয়া চিঠি পড়ে খানিকটা অনুমান করতে পেরেছে। একটা মেয়ে তার নিজের ঘর ছেড়ে অন্য ঘরে আসার পর যখন জানতে পারে, সে রোজ রোজ প্রতারিত হচ্ছে, তার কেমন বোধ হতে পারে? মানুষ একই ছাদের নিচে থাকে বিশ্বাসে, ভালোবাসায়। অথচ, হিয়া এতগুলো দিন ভুল বিশ্বাসে বেঁচে ছিল।আর্নিশা আর আমার জীবন আজ মোহনায় বেঁকে যাওয়া দুটি নদীর মতন যাদের মিলন অসম্ভব। আমি আজ সন্ধ্যাবাজারে নিজের অতীত বিসর্জন দিয়ে দিলাম। আর্নিশাকে যেহেতু একসময় ভালোবাসতাম, সেহেতু আজ আবার সম্পর্ক স্থাপন করা আমাদের দুজনের জন্যই ক্ষতিকর।আর্নিশাকে ভালো বাসতে বাসতে যেমন আর্নিশা অভ্যাস হয়ে গেছে,তেমন হিয়াকে অভ্যাস ভাবতে ভাবতে আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি।ভালোবাসাকে অভ্যাস করা আর অভ্যাসটাকে ভালোবেসে ফেলার মধ্যের পার্থক্যটা আলাদা।আর্নিশা এবং আমার আজ আলাদা আলাদা ঘর আছে। দিনশেষে তো মানুষকে তার নিজের ঘরেই ফিরতে হয়। আমি আমার ব্যক্তিগত ঘরে ফিরতে চাই। হিয়া আমার শেষ আশ্রয়। আর্নিশার জীবনে নিজেকে অপূর্ণতার হাড়িকাঠে বলিদান দিয়ে আসার পরেও ব্যক্তিগত ঘরে ফিরে পেয়েছিলাম অপূর্ণতা। জীবনযুদ্ধে সকল বাধা সয়েও পরিস্থিতির বেড়াজালে জীবনের শেষে রয়ে যায় অপূর্ণতা। উপন্যাসের চরিত্রগুলো কাল্পনিক হলেও ব্যক্তি জীবন, সমাজ চিত্র বুননের বাস্তবতা ফুটে উঠবে পাঠক হৃদয়ে।একজন হস্তশিল্পী যেমন কাঁথার ফোঁড় দিতে স্বপ্ন বুনে সেই স্বপ্ন কখনো কখনো অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তেমনই জীবনের কিছু ভুল থাকে যা জীবন পরিপূর্ণতা থেকে ছিটকে যায়।