অ্যাটেনশন, প্রটিয়াস। অ্যাটেনশন, প্রটিয়াস। মিশন শেষ হওয়ার আগে এটাই সবশেষ ভয়েস মেসেজ শুনছো তোমরা। মিনিয়েচারাইজেশন শেষে নির্দিষ্ট ষাট মিনিট সময় পাবে। তার আগেই বেনেসের শরীর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে তোমাদের। নইলে আবার স্বাভাবিক আকারে ফিরে হত্যা করবে বেনেসকে। ডক্টর মাইকেলস─রক্তসঞ্চালন তন্ত্রের লেখচিত্রকর। ক্যাপ্টেন উইলিয়াম ওয়েন্স─প্রটিয়াস নামে নিউক্লিয়ার পাওয়ার্ড জাহাজের নকশাকার। ডক্টর পিটার লরেন্স দ্যুভাল─অভিজ্ঞ ব্রেন সার্জন। মিস কোরা পিটারসন─ডক্টর দ্যুভালের সহকারিণী। অপরূপ সুন্দরী। এবং চার্লস গ্র্যান্ট─সিক্রেট সার্ভিস এজেন্ট। বিখ্যাত বিজ্ঞানী জ্যান বেনেস দেশত্যাগ করতে গিয়ে মস্তিষ্কে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন। অচেতন─মুমূর্ষু অবস্থা। নিউক্লিয়ার পাওয়ার্ড জাহাজ প্রটিয়াসে আণুবীক্ষণিক আকারে মুমূর্ষু বিজ্ঞানীর মহাধমনীতে ইঞ্জেক্ট করা হয়েছে ওদের পাঁচজনকে। ওদের মিশন: বিজ্ঞানীর মাথায় রক্তের একটা ক্লটের কাছে পৌঁছে লেজার রশ্মিতে ধ্বংস করতে হবে সেটা। সময় : মাত্র ষাট মিনিট! ওদের সাফল্যের ওপরই নির্ভর করছে গোটা দুনিয়ার ভবিষ্যৎ। হৃৎপিণ্ড থেকে শুরু করে শরীরের নানা অংশ ঘুরে, বিস্ময় জাগানিয়া সব জিনিস দেখে, নানা অভিজ্ঞতা অর্জন এবং মৃত্যুর হুমকি মোকাবিলা শেষে মস্তিষ্কে পৌঁছাল ওরা। সময় ফুরিয়ে আসছে দ্রুত! বাঁচতে হলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বেরিয়ে আসতে হবে! ওদের ভেতর রয়েছে একজন বেঈমান। প্রতি পদক্ষেপে অভিযান পণ্ড করতে তৎপর সে। মানুষের দেহাভ্যন্তরে ক’জন অসমসাহসী মানুষের অবিশ্বাস্য অভিযানের টানটান উত্তেজনাময় অনন্য কাহিনী।
বিংশ শতকের অন্যতম সেরা লেখক আইজ্যাক আসিমভ সাহিত্যজগতের এক উজ্জ্বল নাম। তিনি ১৯২০ সালের ২ জানুয়ারি সোভিয়েত রাশিয়ার পেত্রোভিচি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পরিবারের সাথে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ব্রুকলিনে শুরু করেন নতুন জীবন। ছোটবেলায়ই তাঁর বাবা তাকে লাগিয়ে দেন নিজেদের ক্যান্ডিশপে দোকানদারির কাজে। ছোট্ট আসিমভ পাঁচ বছর বয়সেই নিজে নিজে পড়তে শিখে যান। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি হাই স্কুল শেষ করেন এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি ১৯৩৯ সালে ব্যাচেলর অব সায়েন্স এবং পরবর্তীতে এমএ ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে তিনি বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি হলেও তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করতে নিয়মিত শিক্ষকতা করেননি। ১৯৫০ সালে বের হয় তাঁর প্রথম বই ‘পেবলস ইন দ্য স্কাই’, যা জয় করে নেয় সাধারণ পাঠকের মন। এরপর একের পর এক লেখা বের হতেই থাকে তাঁর। তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যকর্মের মূল আধেয় হলো সায়েন্স ফিকশন, পপুলার সায়েন্স, রহস্য ইত্যাদি। সৃজনশীল মেধাসম্পন্ন এই লেখক ৫০০টিরও বেশি বই রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। জনপ্রিয় লেখক আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমূহ হলো, ‘আই,রোবট (১৯৫০)’, ‘ফাউন্ডেশন (১৯৪২)’, ‘দ্য এন্ড অব ইটারনিটি (১৯৫৫)’, ‘দ্য কেভস অব স্টিল (১৯৫৩)’, ফ্যান্টাস্টিক ভয়েজ (১৯৬৬)’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত উপন্যাসই শুধু নয়, তুমুল জনপ্রিয় তাঁর ছোটগল্পগুলোও। আসিমভ এর রচনাগুলো থেকে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের চলচ্চিত্র, যার মাঝে আছে ‘আই,রোবট (২০০৪)’, ‘বাইসেন্টেনিয়াল ম্যান (১৯৯৯)’ ইত্যাদি। বিশ্বজোড়া প্রকাশিত আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমগ্র জয় করে নিয়েছে সায়েন্স ফিকশন পাঠকদের মন। তাঁর বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বের নামিদামী পরিচালক তৈরি করেছেন চলচ্চিত্র, বানিয়েছেন সিরিজ। ১৯৮৭ সালে ‘সায়েন্স ফিকশন রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’ তাকে ‘গ্র্যান্ড মাস্টার অব সায়েন্স ফিকশন’ সম্মানে ভূষিত করে। তাঁর লেখা ‘ফাউন্ডেশন (ট্রিলজি)’ ১৯৬৬ সালে এনে দেয় ‘হুগো এওয়ার্ড’, ‘দ্য গডস দেমসেল্ভস’ এনে দেয় একইসাথে ‘হুগো’ ও ‘নেবুলা’ অ্যাওয়ার্ড। কল্পবিজ্ঞানের এই মহা কারিগর ১৯৯২ সালের ৬ এপ্রিল ব্রুকলিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।