মনে আছে এরোমেটিক বিউটি সোপের কথা? ১৯৯৯ সালে ঢাকা শহর প্রায় ছেয়ে গিয়েছিলো “১০০ ভাগ হালাল সাবান” লেখা বিজ্ঞাপনে। এটি এতটাই সফল এক মার্কেটিং আইডিয়া ছিলো যে, বাজারে ছাড়ার প্রথম বছরেই ১৪ ভাগ মার্কেট শেয়ার দখল করে নেয়। পৃথিবীর সবচাইতে বহুল পঠিত মার্কেটিংয়ের পাঠ্য বইতেও এই হালাল সাবানের কথা উল্লেখ করা হয়েছিলো। এটি ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসে হালাল মার্কেটিংয়ের সবচাইতে সফল ও জনপ্রিয় উদাহরণ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও হালাল মার্কেটিংয়ের এমন শত শত উদাহরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। প্রলয় হাসান তার কয়েকটিকে তুলে এনেছেন এ বইতে।
বাংলাদেশের প্রথম দিককার গ্রোসারী সুপারশপ। টানা প্রায় ২ দশকের অভিজ্ঞ এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত এক ব্র্যান্ড, অথচ তাদের ব্র্যান্ড পজিশনিং খুজঁতে গিয়ে হাতড়ে বেড়াতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিক্রিই হয়ে গেলো তারই এক প্রতিদ্বন্দীর কাছে। কি হতে পারতো এর মারাত্নক শক্ত এক ব্র্যান্ড পজিশনিং?
মনে আছে সেলবাজার ডট কমের কথা? বাংলাদেশের প্রথম ক্লাসিফাইড মার্কেট প্লেস ছিলো সেটি। কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে রিব্র্যান্ডিং করা হলো এখানেই ডট কম নামে, কিন্তু এর অল্প কয়েক বছরের মাথায় রাতারাতি বন্ধ করে দেয়া হলো একে! পত্রিকাতেও ছাপানো হয়েছিলো ধোয়াশায়ঁ মোড়ানো প্রেস রিলিজ। শেষে নির্ভরযোগ্য একাধিক সোর্স থেকে পাওয়া গেলো কিছু চমকপ্রদ তথ্য! পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো এখানেই ডট কম বন্ধ হবার বেশ কয়েকটি কারণ!
আমাদের দেশের একটা হ্যাবিট ফরমিং উদাহরণের কথা যদি বলতে বলা হয়, কোনটার নাম বলবেন? চিন্তা করেন দেখুন তো, দেশেই এমন কোন একটা প্রডাক্ট আছে কিনা, যারা প্রথমবারের মতো গ্রামাঞ্চলের মানুষের মাঝেও মোবাইল অ্যাপ দিয়ে মোবাইল রিচার্জ করা, টাকা লেনদেন করা – এসব জনপ্রিয় ও অভ্যস্ত করেছিলো, যেখানে ইন্টারনেট নেই কিংবা থাকলেও গতি খুবই কম। কিভাবে তারা এই অসাধ্য সাধন করলো?
ভারতের শিল্পমন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজ ৯০ এর দশকে পেপসির হেড কোয়ার্টারে তিনি চিঠি লিখলেন – “আমিই ভারত থেকে কোকা-কোলাকে বের করে দিয়েছিলাম। তোমরা যদি ভারতে আসো, তবে জেনো রাখো, তোমাদের জন্যও ঠিক একই পরিণতি অপেক্ষা করছে!” ভারতে সুদীর্ঘ সময় ব্যবসা বন্ধ রাখার পর, এত এত রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার পরেও কোক আর পেপসি কি করে ভারতে আবার সফলভাবে তাদের ব্যবসা শুরু করতে পেরেছিলো?
আমেরিকার দুই বার্গার জায়ান্টের একটি অপরটির বিরুদ্ধে কি এমন মার্কেটিং চাল চেলেছিলো, বিশ্ব মিডিয়া যাকে “পারফেক্ট গেরিলা মার্কেটিং” বলে অভিহিত করেছিলো? কেন বিশ্বের বাঘা বাঘা সব মিডিয়া আর মার্কেটিং বোদ্ধা বিস্মিত ও প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে গিয়েছিলো এই গেরিলা মার্কেটিং দেখে?
একজন মাত্র অসন্তুষ্ট গ্রাহক - যিনি কিনা পেশায় গায়ক - কি করে আমেরিকার একটি বড় এয়ারলাইনস কোম্পানিকে ১৮০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতির মুখোমুখি করে দিলেন? হাডার্ভ বিজনেস রিভিউতেও উঠে আসলো এই ঘটনা – এ ধরনের ইন্টারেস্টিং কিছু কেইস স্টাডি বইটিতে স্থান পেয়েছে – যা বাংলা ভাষাতে এর আগে কখনো লেখা হয়নি।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ধানমন্ডি গভ. বয়েজ থেকে জন্ম, বেড়ে ওঠা ও স্থায়ী বসবাস ঢাকাতে। ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা সিটি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে পাড়ি জমান উচ্চতর শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশের মাটিতে ফিরে এসে মার্কেটিংয়ে এমবিএ করেছেন। ভোক্তা সন্তুষ্টির উপর তাঁর একটি একাডেমিক গবেষণাপত্র রয়েছে। ভবিষ্যতে চার্টাড মার্কেটার হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। মার্কেটিং কর্মকর্তা ছিলেন দেশীয় টেকনোলজি স্টার্টাপ, ই-কমার্স, মার্কেটিং এজেন্সি, এবং দেশি-বিদেশি কয়েকটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে। বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং পেশায় রয়েছে। নিজস্ব একটি ডিজিটাল মার্কেটিং কনসালটেন্সি ফার্মও রয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে অনলাইনে বাংলা ভাষায় নিয়মিত লেখালেখি করছেন। গত কয়েক বছর ধরে মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং নিয়ে তিনি প্রায় নিয়মিতই লেখালেখি করছেন, দেশের ব্র্যান্ড চর্চাজীবিদের কাছে সেগুলো পেয়েছে তুমুল পাঠকপ্রিয়তা। প্রলয় হাসানের মার্কেটিংয়ের অনুসন্ধিৎসু লোকাল কেইস স্টাডি ছাপা হয়েছে একাধিক জাতীয় দৈনিক ও ম্যাগাজিনে, বানানো হয়েছে ডকুমেন্টারিও। একদিন বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব ও এথিক্যাল মার্কেটিংয়ের চর্চা শুরু হবে, প্রলয় হাসান এটি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন।