"জেমস বন্ড সমগ্র" বইতির মুখবন্ধ থেকে নেয়াঃ এক বিশেষ শ্রেণীর বর্ণনাত্মক গল্প, যেখানে আছে নায়কের অসীম বীরত্ব গাঁথা, আছে বিশেষ কোনাে সমস্যার মীসাংসায় নায়কের সূক্ষ্মবুদ্ধি ও সন্ধান তৎপরতার সাফল্য, আছে মৃত্যু উপেক্ষা করা ও পদে পদে বিপদ-প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করা চিরসবুজ বীর প্রেমিকের অভিযান-কাহিনী এবং অসম্ভব বা অবাস্তব কাহিনী বাস্তবতা-অতিক্রান্তী রূপে আত্মপ্রকাশ করা কল্পকাহিনী। বিশ্বসাহিত্যে এ জাতীয় গল্পের সার্থকতম স্রষ্টা ইয়ান ফ্লেমিং। তাঁর রচিত ‘০০৭ জেমস বন্ড’ গল্পগুলি পূর্বোক্ত বিষয়াবলির অনিন্দ প্রকাশ। এ জাতীয় কাহিনীগুলি পাঠকের কল্পজগৎকে বিস্তৃত ও বর্ণময় করে তােলে। পাঠককে তার মানবিক দুর্বলতা ও ভীরুতাকে অগ্রাহ্য করতে প্রাণিত করে। পাঠকের মধ্যে কাহিনীর নায়ককে আবিষ্কার করার প্রবল , প্রবণতা প্রত্যক্ষ করা যায়। ইয়ান ফ্লেমিং সৃষ্ট জেমস বন্ড এমনি এক চরিত্র যে পাঠকের ভেতর অনুপ্রবেশ করে পাঠককে জেমস বন্ড এ রূপান্তরিত করে। ইয়ান ফ্লেমিং এর সৃজন বিপুল নয়। তিনি রচনা করেছেন ১৪টি উপন্যাস ও তিন-চারটি ছােটগল্প। তিনি খুব কম লিখলেও জেমস বন্ডের জন্যে রয়েছে তার বিশ্বখ্যাতি। ফ্লেমিং তার অধিকাংশ রচনার নায়কের নামকরণ করেছেন জেমস বন্ড। ফলে অসংখ্য কাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক স্বাতন্ত্র থাকলেও নায়কের নাম এক হওয়ার কারণে ঐসব লেখাগুলি একটি সমগ্রের মধ্যে। মলাটবন্দি হয়েছে। এবং তার নামকরণ হয়েছে “জেমস বন্ড সমগ্র'। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় নায়ক জেমস বন্ড জনপ্রিয়তার বিচারে জেমস হেডলি চেজের কাছাকাছি। আর্থার কোনান ডয়েলের বিশ্বখ্যাত শার্লক হােমস এর পাঠক প্রিয়তাও জেমস বন্ডের সমতুল্য। ডিটেকটিভ গল্প লেখক উইলিয়াম তুফলেন ল্য কুইক্স রচিত স্পাই চরিত্রের সাথে তুলনা করা চলে জেমস বন্ডকে। জেমস বন্ড সিনেমার বড় পর্দায় সাড়া জাগানো সজীব পুরুষ। ইয়ান ফ্লেমিং এর চরিত্রসৃজন এতই নান্দনিক ও জীবন্ত যে তাকে পর্দায় প্রত্যক্ষ করে দর্শক নিজের ভেতরে জেমস বন্ডের উপস্থিতি অনুভব করে। অর্থাৎ দৃষ্টির মধ্যে আবিস্কৃত কাল্পনিক চরিত্র, দর্শকের প্রাণস্পর্শী কল্পলােকে মূর্ত হয়ে ওঠে। বস্তুত সিনেমা বা টেলিভিশন যেখানেই জেমস বন্ড সেখানেই দর্শকের মধ্যে জেমস বন্ডের অস্তিত্ব প্রাপ্তি। ১৯৬৫ সালে যখন হলিউডে ইয়ান ফ্লেমিং এর এই বিখ্যাত কাহিনী নিয়ে ০০৭ নামে সিনেমা হলাে, তখন বিশ্বব্যাপী খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল জেমস বন্ডের। দেখা গেল ইয়ান ফ্লেমিং অপেক্ষা অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠল জেমস বন্ড। অনেকটা জেমস বন্ডের অন্তরালে ম্লান হয়ে গেলেন ফ্লেমিং। জেমস বন্ড গল্পে বারংবার ব্যবহৃত হয়েছে রহস্যঘেরা সংখ্যা ০০৭। কেনাে এই সংখ্যা? এ প্রশ্ন বহু পাঠকের। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে ১৮১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক রডইয়ার্ড কিপলিং রচনা করেন দি ডেজ ওয়ার্ক'। ডেজ ওয়ার্কের একটি গল্পের নাম ০০৭। ইয়ান ফ্লেমিং ছিলেন কিপলিংয়ের বিশেষ ভক্ত পাঠক। ইয়ান কিপলিংয়ের প্রভাবে ০০৭ সংখ্যাটি জেমস বন্ড গল্পগুলিতে ব্যবহার করেছেন। অধুনাকালে সিনেমা ও টেলিভিশনের কারণে জেমস বন্ড জনপ্রিয়তায় হেডলিং চেজ, ল্য কুইক্স, কোনান ডয়েল, কিপলিং প্রমুখকে ছাড়িয়ে গেছেন। জেমস বন্ডের প্রাত্যহিক আচরণ, কর্মকান্ড ও স্বপ্নময় পথচলায় বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ প্রভৃতি এখন যুব মানসের আদর্শ এবং অনুকরণের বিষয়। এখন ইয়ান ফ্লেমিং এবং জেমস বন্ড ইংরেজি সাহিত্যের সীমানা ছাড়িয়ে, ইউরােপের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে বিশ্ব সাহিত্যের ও বিশ্বমানবের সম্পদে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই বলা যায় ইয়ান ফ্লেমিং সার্থক এবং সার্থক তাঁর অনবদ্য সৃজন জেমস বন্ড।