"বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার ঘোষক" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ২৫ মার্চ মাঝরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘােষণা প্রদান করেন। তাঁর পক্ষে ঘােষণাটি ওয়্যারলেস এবং চট্টগ্রামস্থ স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত হয় ২৫ মার্চ দিনগত মধ্যরাত তথা ২৬ মার্চের প্রথম প্রহর থেকে। কিন্তু এই ঘােষণা কোথা থেকে, কিভাবে, কার মাধ্যমে পাঠানাে হয়েছিল সে সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশিত না হওয়ায় এ নিয়ে কেউ কেউ জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চালায় এবং বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘােষণা আদৌ দিয়েছিলেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তােলার ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে। এই প্রশ্নটিকে ভিত্তি করে তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার নানারকম অপচেষ্টা চালায়। আসলে একটি আইনানুগ সরকারের অধীনে থেকে তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত নিজেদের সিদ্ধান্ত বা গৃহীত কর্মকৌশল গােপন রাখাই যুক্তিযুক্ত। কারণ রণকৌশল প্রনেতাও কৌশল বাস্তবায়নকারীদের নাম-ধাম আগেই প্রকাশ হয়ে গেলে তার সুযােগ নিত শত্রুপক্ষ। এর পরিণতি ভােগ করতে হতাে এই সংগ্রামের নেতাসহ গােটা জাতিকে। এই বইয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘােষণার পূর্বপ্রস্তুতি, ঘােষণার প্রেক্ষাপট এবং সেই ঘােষণার বার্তা যে রেডিওতে প্রচারের আগেই ওই রাতের মধ্যে চট্টগ্রাম শহরের আনাচে-কানাচে এবং ২৬ মার্চের মধ্যেই সারা দেশসহ বহির্বিশ্বে পৌঁছে যায় সে বিষয়টি নির্ভরযােগ্য। তথ্য-উপাত্ত-যুক্তি ও সাক্ষ্য-প্রমাণসহ তুলে ধরা হয়েছে। ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু পাঠকসহ ছাত্র-শিক্ষক গবেষকরাও বইটি পড়ে অনেক অজানা ইতিহাসের সন্ধান পাবেন। এতে এ নিয়ে বিভ্রান্তিরও অবসান হবে বলে আশা করা যায়।
জন্ম ১৮ অক্টোবর ১৯৫৬ সালে, চট্টগ্রামের পটিয়া। উপজেলার আল্লাই (কাগজিপাড়া) গ্রামে। বাবা মৌলভি নুরুল হক ও মা নূর খাতুন। ৭৭ সালে অধুনালুপ্ত দৈনিক জমানার হাত ধরে সাংবাদিকতার শুরু | জাতীয় দৈনিক প্রথম আলাের জন্মলগ্নে যুক্ত হয়ে প্রায় সাড়ে ১৫ বছর পর পদত্যাগ। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা এবং লেখালেখিতে নিয়ােজিত। গত সাড়ে ৫ বছর ধরে প্রকাশ করছেন গবেষণামূলক সাময়িকী ইতিহাসের খসড়া। তিনি ১৯৭৭-৭৯ সালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ মহকুমা (পটিয়া) । প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোক্তা-সংগঠক এবং চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সােসাইটির সহসভাপতি ছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি, চট্টগ্রাম জেলা । কমিটির সভাপতি এবং খেলাঘর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটির সহসভাপতি। তিনি একজন প্রাবন্ধিকও। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধনিবন্ধ প্রায় চারশ। প্রকাশিত গ্রন্থ ৮টি। মুহাম্মদ শামসুল হক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক লেখালেখি ও সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য একাধিক সম্মাননা পেয়েছেন। স্বাধীনতার বিপ্লবী অধ্যায়-বঙ্গবন্ধু ও অন্যান্য-৪৭-৭১ গ্রন্থটি ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম । প্রেস ক্লাব আয়ােজিত বই প্রতিযােগিতায় । গবেষণা-সাহিত্যে সেরা গ্রন্থ নির্বাচিত হয় এবং তিনি সেরা লেখক-সাংবাদিক পুরস্কার পান।। ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপােরেশন তাকে 'একুশে স্মারক সম্মাননা পদক প্রদান করে।