ফ্ল্যাপে লিখা কথা মধুসূদনের সমগ্র কাব্যসাধনার পরিচয় দানের উদ্দেশ্যে এই গ্রন্থ রচিত হয়েছে। অর্থ্যাৎ সমগ্র গ্রন্থটি মধুসূদনের কাব্য ও নাট্যকীর্তির একটি বিশাদ ভূমিকা ও বিশ্লেষণ ব্যাখ্যা স্বরূপ। অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান এই বইয়ের মধ্যে দিয়ে মাইকেল মধুসূদন দত্তের শিল্পকৌশলের সমালোচনা প্রসঙ্গে তার জীবনের একটি সংক্ষিপ্ত অথচ নিটোল আলোচনা করেছেন। বস্তুত, এই আলোচনাটুকু যদি কোন পাঠক সর্বপ্রথম পড়ে নেন, তবে তিনি মধুসূদনের কবিতার রচনাশৈলী ,ব্যক্ত দৃষ্টিভঙ্গী এবং বাংলা সাহিত্যের ওই সময়কার বিকাশ ও বিপ্লবী পরিবর্তনের হেতু অনায়াসেই অনুধাবন করতে পারবেন। অমিত্রাক্ষর ছন্দে গতি, প্রাণময়তা এবং দৃঢ়িতার একত্র উপস্থিতিরগূঢ় কারণটি অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান চমৎকারভাবে এই গ্রন্থে উপস্থাপন করেছেন। একজন কবি হিসেবে সৈয়দ আলী আহসান যে নিষ্ঠা নিয়ে মধুসূদনের কাব্যদর্শন ও রচনাশৈলী গভীরভাবে গবেষণা করেছেন, তা সাধারণ পাঠকের ক্ষেত্রে কষ্টকিতভাবে উপস্থিত করেননি,এ কৃতিত্ব তাঁর প্রাপ্য।
এই আলোচনা গ্রন্থে লেখক মধুসূদনের কাব্যরীতি এবং শিল্পকৌশল নিয়ে যে আলোচনা করেছেন তা নতুনভাবে এ দেশের পাঠককে মধুসূদনের রচনাবলী পড়তে উৎসাহিত করবে।
অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান আলোচনার ক্ষেত্রে যে ব্যাপকতার সমাবেশ করেছেন তার বইয়ের পাদটীকা অনুসন্ধিৎসুদের আগ্রহ মিটাতে সাহায্য করবে। মধুসূদনের কবি-কৃতির সম্যক উপলব্ধি ও উদঘাটনের ক্ষেত্রে, আলোচ্য গ্রন্থটি পথিকৃত হয়ে থাকবে।
Syed Ali Ahsan (২৬শে মার্চ, ১৯২২ - ২৫শে জুলাই, ২০০২) বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা সাহিত্যিক, কবি, সাহিত্য সমালোচক, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। তিনি তাঁর পাণ্ডিত্যের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। সৈয়দ আলী আহসান কৃত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের ইংরেজি অনুবাদ সরকারি ভাষান্তর হিসাবে স্বীকৃত। পুরোনো ঢাকা শহরের আরমানিটোলায় অবস্থিত আরমানিটোলা সরকারি হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স (এসএসসি) এবং ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে ঢাকা কলেজ) থেকে এফএ (এইচএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে স্নাতক (বিএ)এবং ১৯৪৪ সালে স্নাতকোত্তর (এমএ) ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি কলকাতা চলে যান। সেখানেই বিয়ে করেন ৭ জুলাই, ১৯৪৬। অত:পর যথাক্রমে অল ইন্ডিয়া রেডিও কলকাতা কেন্দ্রে এবং রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রে কর্মসূচি নিয়ামকরূপে চাকরি করেছেন। তিনি ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে সৈয়দ আলী আহসান করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান নিযুক্ত হন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা একাডেমীর পরিচালক (প্রধান নির্বাহী) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর পুনরায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুলাই তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।