পড়ার প্রতি ঝোক বরাবরই ছিল। লিখতে সাহস পাইনি। পাঠ্যবই এর পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকুমার রায়, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিম চন্দ্র প্রমুখ কবি ঔপন্যাসিকদের লেখা নিয়মিত পড়া হতাে বাল্য কাল থেকেই। বাবা শিক্ষক হবার কারণে কিছু বই পুস্তকের সাথে ওঠা বসা ছিল বাল্যকাল থেকেই। তাই পড়ার নেশা ছিল বরাবরই। সঙ্গিত চর্চা আমার অন্যতম নেশা থাকায় গান, গীতকবিতা প্রভৃতি নিয়ে ভাবনা ছিল। কিছু গান লেখা হতাে সাহস করে। ছড়া বা কবিতা লেখার মতাে দুঃসাহস হয় নি। প্রযুক্তির কল্যাণে ফেসবুকে লেখা লেখি শুরু করি ২০১৪ সালে। কল্পনাশক্তি ভীষণ দূর্বল তাই আশেপাশে যা দেখি তা নিয়েই লিখতে শুরু করি। সংগতি, অসংগতি, হাস্যরস, দুঃখ, আনন্দ প্রভৃতিকে বিষয়বস্তু বিবেচনায় আমার লেখালেখি নামক পাগলামাে। আধুনিক কবিতা পড়ি তবে, এর বিমুর্ত প্রকৃতি আমাকে হতাশ করে ও সেসব লেখার আগ্রহ থেকে দূরে রাখে। আবার শব্দজ্ঞান, কাব্যজ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণেই হয়তােবা। সুকুমার রায়ের ছড়া আমার লেখার অনুপ্রেরণা। ছড়া বলতে আমরা শুধু শিশুদের পাঠোপযােগী ছােট্ট কবিতা বুঝে থাকি। কিন্তু আমার মনে হয় ছড়ার অন্তর্নিহিত রহস্য ভেদ করার জন্য উন্নত চিন্তার প্রয়ােজন ও একজন প্রকৃত পাঠকের প্রয়ােজন। বাবুরাম সাপুড়ে একটি ছােট্ট ছড়া হলেও এর অন্তর্নিহিত সত্য অনেক বড়। এটি পাঠ্য পুস্তকে পড়ে বুঝতে পারিনি। কারণ তখন পড়াশুনার সবটুকু জুড়ে ছিল বার্ষিক পরীক্ষায় নম্বর প্রাপ্তির প্রত্যশা। মধ্যবয়সে এসে আজও বারবার ছড়াটি পড়ে নতুন নতুন বিষয়বস্তুর সন্ধান পাই। অল্প কথায় ঘণীভূত করে বৃহৎ একটি ভাবনাকে ফুটিয়ে তােলার মুন্সীয়ানা রয়েছে এই সব ছড়ার মধ্যে। সুতরাং ছড়া বলতেই শিশুপাঠ্য নয়, আমার মতে ছড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আমার এ পুস্তকের ছড়াগুলি অনেকটা সনাতনী কবিতার মত অর্থাৎ, অন্ত্যমিল স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত প্রভৃতির সমাবেশ ঘটিয়ে রচিত হয়েছে যেখানে বিষয়বস্তুর প্রধান্যই মূখ্য। কিছু লেখা আছে কথােপকথােন আকারে যেখানে বক্তা, শ্ৰোতা ও উত্তরদাতা শুধু মানুষই নয় পশুপাখি, ফুল, নদী প্রভৃতি। লেখাগুলিও না ছড়া না কবিতা ‘পদ্য বলা যায় হয়তােবা।