ভূমিকা: একটা মধ্যবিত্ত পরিবার। আর দশটা সংসারের মতোই হাসি-কান্না, খুনসুঁটি, সুখ-দুঃখের আসা-যাওয়া সেখানে। সচ্ছলতা তেমন না থাকলেও এই পরিবারে আনন্দ আছে। কিন্তু হঠাৎ একদিন মারা যান পরিবারের কর্তা। স্বর্নার বাবা। স্বর্না আর তার বোনকে নিয়ে অকুল পাথারে পড়েন স্বর্নার মা। বাবার ইচ্ছে ছিল স্বর্না ডাক্তার হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াবে। স্বামীকে হারানোর পর সেই স্বপ্ন পূরণে স্বর্নার মা আরও উঠে পড়ে লাগেন। দুই মেয়েকে নিয়ে একলা এক মায়ের জীবন সংগ্রামের গল্প পাওয়া যায় এই উপন্যাসে। অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের পর স্বর্না ডাক্তার হয়। ৩৯ তম বিসিএসে পাস করে যোগ দেয় একটা সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু এর কিছুদিন পরই সারা বিশ্বে আঘাত হানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। ভাইরাসের চেয়েও দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। প্রতিদিন বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যা। আর সবাই ঘরে নিজেকে বন্দী করে ফেললেও একজন চিকিৎসকের সে উপায় নেই। শুরু হয় স্বর্নার পরিবারের এক নতুন যুদ্ধ। একজন ডাক্তার আর তার পরিবার যে করোনাকালীন সময়ে কী কঠিন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে, সেটাই উঠে এসেছে গল্পে। প্রতিদিন যেহেতু হাসপাতালে যেতে হয়, নিজেকে পরিবার থেকে দূরে সরিয়ে নেয় স্বর্না। এরই মধ্যে একদিন কোভিডে আক্রান্ত হয় সে। এবার স্বর্নাও বন্দী হয়ে পড়ে। মাকে বুকে জড়িয়ে ধরার উপায় নেই, বোনের সঙ্গে মন খুলে গল্প করার উপায় নেই, স্বর্না তবু মনোবল হারায় না। অসুস্থতা নিয়ে ঘরে বসে টেলিমেডিসিন সেবা দিতে থাকে সে। দিন নেই রাত নেই, কখনো মোবাইলে, কখনো ল্যাপটপে...রোগীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় স্বর্নাকে। ধীরে ধীরে তাঁর শরীর দুর্বল হতে থাকে, তবু সে হাল ছাড়ে না। তাঁর সহায়তায় বাঁচে অনেক প্রাণ। কিন্তু স্বর্না কি বাঁচবে? বদ্ধ ঘরে বন্দী স্বর্না মনে মনে ভাবতে থাকে, একজন রোগীকে সুস্থ করার পর তাঁর মুখে যে অনাবিল হাসি ফোটে, সেই প্রিয় হাসিটা কি স্বর্নার আর কখনো দেখা হবে? বুক ভরে দম নেওয়ার দিনগুলো কি আর কখনো ফিরে আসবে না?
রাহিতুল ইসলাম (Rahitul Islam) একজন বাংলাদেশি তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিক, লেখক ও নাট্যকার। বর্তমানে দেশের একটি শীর্ষ দৈনিকে সাংবাদিকতা করছেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চাও করেন। তবে তাঁর আগ্রহের বিষয় মূলত তথ্যপ্রযুক্তি। সংবাদপত্রে লিখে আর কথাসাহিত্য রচনার মধ্য দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন পাঠকদের এই জগতের জানা-অজানা নানা বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত করাতে। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১২। উল্লেখযোগ্য উপন্যাস: ‘কল সেন্টারের অপরাজিতা’, ‘চরের মাস্টার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার’, ‘হ্যালো ডাক্তার আপা’, ‘ভালোবাসার হাট-বাজার’ এবং ‘কেমন আছে ফ্রিল্যান্সার নাদিয়া’। ‘আউটসোর্সিং ও ভালোবাসার গল্প’ বইটি ফিলিপাইন থেকে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘আউটসোর্সিং ও ভালোবাসার গল্প’ বইয়ের জন্য জাতীয় ফ্রিল্যান্সিং অ্যাওয়ার্ড (২০১৯) এবং ‘কল সেন্টারের অপরাজিতা’র জন্য এসবিএসপি সাহিত্য পুরস্কার (২০২১) পেয়েছেন।