কাহিনী সংক্ষেপ: নিতু মুঠো খুলে আবার আংটিটা দেখলো। প্লাটিনামের অসাধারণ রিং। ভেতরে সুন্দর করে লিখা, ভালোবাসি আপনাকে। নিতুর নামের ‘এন’ টা ছোট্ট করে হিন্ট দেওয়া। ব্যস, এখন মাহবুব ভাই বুঝলেই হয়। চারপাশটা দেখে নিয়ে নিতু কেকের উপরের ক্রিমে আংটিটা দাবিয়ে দিলো। মাহবুব ভাই দূরে অন্যমনস্ক হয়ে পলাশের সাথে কথা বলছেন। কেকের প্লেটটা হাতে নিতেই নিতুর মনে হলো, মাহবুব ভাই কেকটা তার হাত থেকে নাও খেতে পারেন। এমন কারোর হাত দিয়ে পাঠাতে হবে যাতে মাহবুব ভাই কেকটা খানই খান। নিতু কেকের প্লেট হাতে নানুর বিছানার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। -“নানু কেকটা একটু মাহবুব ভাইকে ডেকে দিয়ে দেবে?” -কেন রে? আমি কেক দিমু ক্যান? আমি কি মাহবুবের কামলা?” -“না মানে বড়চাচা মাহবুব ভাইকে খুব বকেছেন তো; বললেন, তুমি যাতে ডেকে উনার মাথায় হাত বুলিয়ে কেকটা খাইয়ে দাও।” -“তোর বড়চাচার যন্ত্রণায় আর পারি না। মাইনষের কইলজা বিরান বিরান না করলে সে যেন বাঁচে না। কই দেখি কেকটা দে! পোলাডা সারাদিন খাটলো, তাও তাঁর বকুনি। আর কি সে তোর বড়চাচারে হাগার পর শুচাই দেবে?” নিতু নানুর হাতে কেকটা দিয়ে সরে এলো। নানু চেঁচিয়ে মাহবুব ভাই'কে ডাকলেন। পাশে ডেকে আদর করে বসালেন। কেকটা হাতে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, -“নে কেক খা। নিতু দিয়া গেল। তোর মামা পাঠাইছে।” নিতু'র বুকে তখন একশো কোটি বার করে ধুকপুকানি হচ্ছে। মাহবুব ভাইয়ের মুখে যখন আংটিটা ঢুকে যাবে তিনি তখন কি রকম বিষম খায় সেটাই দেখার বিষয়। নিতুকে অবাক করে দিয়ে মাহবুব ভাই আরামসে কেকটা খেয়ে নিলেন। তারপর ঢকঢক করে একগ্লাস পানিও খেলেন। নিতু এক বিষ্ময় হা নিয়ে তাকিয়েই রইলো। মাই গড! মানুষটা আংটিটা খেয়ে ফেলেছেন? এরকমও হতে পারে?এত বড় একটা আংটি মানুষটা খেলো কি করে? নিতু তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেল। প্লেটটা হাতে নিয়ে বিমর্ষ গলায় বললো, -“আপনি পুরোটা কেক খেয়ে ফেললেন?” -“টিকটিকির হাগুর সমান এক পিস কেক দিয়ে বলছিস পুরো কেকটা খেয়ে ফেললাম কেন? দে প্লেট, দে। তোদের বাড়ির কেক বমি করে ফিরিয়ে দিয়ে যাই। এমনিতেও এই কেক আমার হজম হবে না।” নিতু মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আংটিটা শেষমেষ কমোডেই ফ্লাশ হবে। আহারে! তার ভালোবাসা কিনা বাথরুমেই হারিয়ে গেল। মাহবুব ভাই জানলোই না। আহা!
এই একটা ব্যাপার লিখতে এলেই আমার মাথার ভেতর ফাঁকা হয়ে যায়। ব্যক্তিগত তথ্যগুলো কেন জানি মানুষকে জানাতে ইচ্ছে করে না। আরেকটু গুছিয়ে বললে, বলার সাহস পাই না। তবে আজ ঠিক করেছি নিজের কিছু কথা বলবোই। আচ্ছা, লিখা ভালো লাগার জন্য কি লেখকের পরিচয়টা আদৌ জরুরি? আমার মনে হয় না। নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলি, এমন অসংখ্য লিখা আমার ভালো লাগার আছে, যাদের লেখককে আমি দেখিনি। হয়তোবা লেখকের ছবি বইয়ের পেছনে ছিলও। কিন্তু আমি দেখিনি। কারণ লিখার মাধুর্য আর গল্পের চরিত্র আমায় টেনেছে, লেখক নয় । ফেলুদা যখন পড়ি, আমি ভেবেছি ওটা তোপসেরই লিখা অন্য কারো নয়। সত্যজিৎ রায়ের পরিচিতির জন্য আমি কিন্তু একটুও ব্যাকুল হইনি। শার্লক হোমস যখন পড়ি, আমি স্যার আর্থার কোনান ডয়েলকে একদিনও চিনতে চাইনি। বরং বারবার আমার কল্পনায় শার্লক হোমস সামনে এসেছে। বারবার আমি লিখা আর গল্পের চরিত্রতে মুগ্ধ হয়েছি। একজন লেখকের জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া কি জানেন? তাঁর লিখার জন্য পাঠকের ভালোবাসা। সুতরাং তৃধা আনিকার ব্যক্তিগত জীবন আপাতত লুকানোই থাক। তার চেয়ে বরং তৃধা আনিকা তার গল্পে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র সেজে নিজের মনের কথাগুলো অনায়াসে বলে যাক । দেখা যাক না, কি হয়। পাঠক তার লিখাকে কেমন ভালোবাসে, দেখি!