ফ্ল্যাপে লিখা কথা ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জনক মেজর আবদুল গণি-বাঙলা ও বাঙালির সামরিক জীবনে একটি শক্তিরূপে আর্বিভূত হয়েছিলেন। তাঁর সাধনা, অধ্যবসায়, কর্ম-প্রচেষ্টা, বুদ্ধিমত্তা, দেশপ্রেম, নিষ্ঠা, শুভ ও কল্যাণবোধ, সামরিক শিক্ষা ইত্যাদি গুণ একটি পৃথক বাঙালি রেজিমেন্ট গঠনে সহায়ক হয়েছিল। সেনা-ছাউনিতে প্রবেশ করে কয়েক বৎসরের মধ্যেই মেজর গণি উপলদ্ধি করতে পেরেছিলেন যে- বাঙালির জন্য একটি পৃথক রেজিমেন্ট গঠন না হওয়া পর্যন্ত বাঙালির সামরিক জীবনের মুক্তি অসম্ভব। সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই তিনি বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠনের নানাবিধ প্রয়াস চালিয়েছিলেন। এবং অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে তিনি সাফল্য অর্জন করেছিলেন। তাঁর এই সফলতাই পরবর্তীকালে বাঙালি-জীবনে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এবং তিনি বেঙ্গল রেজিমেন্টের জনকরূপে আখ্যায়িত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত বলতেই হয়, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠন করে তিনি যে সাহস, শক্তি, লাবণ্য ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন- এবং বাঙালির জন্য একটি আলোকস্তম্ভ খাড়া করেছিলেন- তাঁর শিখা আজো দেদীপ্যমান- আজো আকাশের ধ্রুব নক্ষত্রের মতো চির সমুজ্জ্বল। জাতির ইতিহাসে তাঁর এই নিরন্তর কর্মপ্রয়াসের চিহ্ন কোনোকালে মুছে যাবার নয়,- নিষ্প্রভ হবারও নয়। তিনি আজ নিজেই ইতিহাস-ঐতিহাসিক জয়স্তম্ভ। একটি কৌম বা জনপদের চেহারায় তাঁর প্রলম্বিত ছায়া চিরকাল পড়তেই থাকবে। ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের জনক মেজর আবদুল গণি : জীবন ও কর্ম গ্রন্থটি যেভাবে এবং যে-কৌশলে নানা তথ্য ও উপাত্ত সমাহারে একটি পরিকল্পনা-মাফিক তিতাশ চৌধুরী বিন্যস্ত করেছেন- তার তুলনা অন্যত্র সত্যি বিরল। তিনি অনেক তুলনা অন্যত্র সত্যি বিরল। তিনি অনেক শ্রম ও কষ্ট স্বীকার করে মেজর গণির বৈচিত্রময় জীবন ও কর্মের বিচিত্র দিক আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। মানতেই হয়- এ ধরনের গ্রন্থপাঠের আনন্দ ও মজাই আলাদা।
সূচিপত্র * আলোকচিত্র * সূচনা * বাল্য কৈশোর ও শিক্ষাজীবন * আর্থ-সামাজিকও রাজনীতির পটভূমি * সৈনিক জীবন * ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টার * ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বীরত্ব-খেতাব প্রাপ্তদের একটি তালিকা * গার্হস্থ্য জীবন * কর্ম ও রাজনীতির জীবন * সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তা * পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদে প্রদত্ত বিভিন্ন ভাষণের আলোকে মেজর গণির পরিচয় মৃত্যু * ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য * মূল্যায়ন
প্রফেসর আবদুল করিম চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯২৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামে প্রাথমিক ও জুনিয়র মাদ্রাসা শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি চট্টগ্রাম ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমান মহসিন কলেজ) থেকে ১৯৪৪ সালে হাই মাদ্রাসা ও ১৯৪৬ সালে আই. এ. পাশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৯ সালে ইতিহাসে বি. এ. অনার্স ও ১৯৫০ সালে ঐ একই বিষয়ে এম. এ. পাশ করেন। ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে লেকচারার হিসেবে যােগদান করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং ১৯৬২ সালে। লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি. এইচ-ডি ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থিসিসের বিষয় ছিল ‘সােশ্যাল হিস্টরি অব দি মুসলিমস্ ইন বেঙ্গল’ এবং লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে থিসিসের বিষয় ছিল মুর্শিদকুলী খান এ্যান্ড হিজ টাইমস্ । ১৯৬২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রীডার পদে উন্নীত হন। ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের রীডার ও প্রফেসর পদে উন্নীত হন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আলাওল হলের প্রভােস্ট এবং কলা অনুষদের ডীনের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত উপাচার্যের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি কয়েক বৎসর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ-এ সিনিয়র ফেলাে এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপার নিউমারারী অধ্যাপক পদেও কর্মরত ছিলেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বহু দেশও ভ্রমণ করেছেন। তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস ছিলেন। ২০০৭ সালের ২৪শে জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।