গ্রীষ্মের বিকেলে অলসপায়ে এগিয়ে এসে বার্কলি স্কয়ারে পৌঁছে পলাশী যুদ্ধের বিজয়ী সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভের বাড়ি দেখে থমকে দাঁড়ালাম। ক্লাইভের গুণমুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল অনেক বছর পর এখানে ফলক লাগিয়ে দেন- Clive of India lived here । এই ফলক পড়ে হাসলাম, ভারতের ক্লাইভ? এদিকে গাছের ফাঁক গলে অপরাহ্ণের সূর্যের কামার্ত ওষ্ঠ সার্পেন্টাইন হ্রদের পানিকে ছুঁয়ে বুঝি নিজেই ধন্য হয়ে উঠেছে। বিগলিত সেই আভা প্রতিফলিত হয়ে সোনালি দুলের মতো রাজশ্রির কানে টলমল করছে, তার মসৃণ গ্রিবার বিন্দু বিন্দু ঘর্মাক্ত ফোঁটায় লাজুক ছায়া পড়েছে। মনে হচ্ছে, সে যেনো এই মর্ত্যের কেউ নয়, বরং এক শ্বাশত অপ্সরা-যার জন্য বায়রনের মতো বোকা মানুষেরা কলঙ্ক পায়ে দলে প্রেমিক হয়, বিজন দেশে প্রাণ হারায় বা রচে অশ্রুভেজা কোন কাব্য। আমার মন চলে যায় বাড়ির পুকুর পাড়ে যেখানে ক্লান্ত অপরাহ্নে কামরাঙা গাছের ছায়ামাখা বেদিতে বসে আমার মা নিরন্তর ডাক পাড়েন, সোনা, কবে ফিরবি? মায়ের চোখের জল আর গোলাপজামের পাতাঝরা পানির ফোঁটা একাকার হয়ে গড়িয়ে পড়ে আমাদের স্নিগ্ধ পাতকুয়োয়। বাতাসের ঝাপটায় বাসি কদম্বরেণুও বুঝি মাটিতে ঝরে পড়ে ঝিরঝিরিয়ে। ঝুমকো জবার ঝাড়ে অস্থির টুনটুনি পাটের আঁশ মুখে নিয়ে কী যেনো খুঁজছে। সুপুরিবনের শীর্ণ ছায়া দীর্ঘতর হয়ে পুকুরের ওপার ছুঁয়েছে। ওদিকে শিকারি পাখি অদূরের পগার থেকে খপ করে খলশে মাছ মুখে নিয়ে উড়ে এসে বনকলমির ডালে বসেছে। কুয়াশা-খেকো লকলকে আগাছার দল অকারণ দুলে বুঝি আমাকেই খুঁজছে। বাবা এখন সন্তানের মঙ্গল কামনায় জায়নামাজে বসে মধুমাখাস্বরে আবৃত্তি করছেন, পড়ো, তোমার প্রভুর নামে।