একজন উপন্যাসিক চাইলে কি না করতে পারেন উপন্যাসের অভ্যন্তরে। তার প্রমাণ হৃদি’ফু উপন্যাস ও তানভীর আলাদিন। ঘটনার পর ঘটনা সাজিয়ে ঘটনার মধ্যে অঘটন বাঁধিয়ে; উপন্যাসের চরিত্রের মধ্যে মিলন ও বিচ্ছেদ এনে পাঠক মনে তিনি যে আলোড়ন তুলেছেন তা বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। সামাজিক প্রথার বাইরে গিয়ে ভালোবাসাকে পুঁজি করে এ উপন্যাসের নির্মাণ নিখুঁত, নিপুণ ও নিরন্তর। প্রদীপ হাসান ও হৃদিতা হাসান, মিলু ও ইলি এ চারটি চরিত্র উপন্যাসের প্রাণকেন্দ্র। প্রদীপ হাসান সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। তার উপন্যাস হৃদি’ফু। কোনো এক কারণে হৃদিতার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় অনেক বছর পূর্বে। কিন্তু তাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা মজুদ ছিল পুরোমাত্রায়। ফলে মিলনের অপেক্ষায় দুজনই ছিল উদগ্রীব। সবাই জানে হৃদি’ফু প্রদীপ হাসানের উপন্যাসের কাল্পনিক চরিত্র। দুবাই এয়ারপোর্টে পরিচয় হওয়া মিলুও প্রদীপের এই উপন্যাসের চরিত্র হৃদি’ফুর অনুরাগী। উপন্যাসিক তানভীর আলাদিন হঠাৎ প্রদীপ ও মিলুর সামনে হৃদিতা হাসান বা হৃদি’ফু কে এনে হাজির করেন। যে বিমূর্ত মুখ প্রদীপ ও পাঠক হৃদয় চিত্রিত হচ্ছিল সেই মুখটি তিনি মূর্ত করে দিলেন অবলীলায়। নানা স্মৃতি আর ভুল বোঝাবুঝির জায়গাগুলো পরিষ্কার করে নতুন উদ্যমে নতুন প্রত্যাশায় প্রদীপ ও হৃদিতা মিলন মালা পরে জীবনকে মহিমান্বিত করতে নেমে পড়ে। মিলু ও ইলি, প্রদীপ ও হৃদিতার জীবনের সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়। বড় কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে তারা একত্রে এগিয়ে চলে। যেন মনে হয় নতুন পৃথিবী বিনির্মাণে এ দুটি যুগল প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন ঘটে মিলুর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। উপন্যাসের চরিত্র, ঘটনা ও এর সত্যতা নিয়ে পাঠক দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকলেও কিছু স্থান বা তথ্য খুবই সাম্প্রতিক ও বাস্তব। তেমন একটি বাস্তবতা বনানীর এফ আর টাওয়ার। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অনেক মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় এই দুর্ঘটনায়। আর এই ঘটনার সঙ্গে যোগ করে দেন মিলুকে। এতে উপন্যাসের আবেদন আরও বেশি হৃদয় বিদারক হয়ে ওঠে। বেশি বয়সে বাচ্চা নেওয়া, কোভিডের সঙ্গে যুদ্ধ করে হৃদিতার ফিরে আসা অবশেষে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু। হৃদিতার চিঠি অনুযায়ী ইলি ও প্রদীপের নতুন জীবন শুরু করার মধ্য দিয়ে পর্দা টানেন উপন্যাসিক আলাদিন। উপন্যাসটি পড়তে পড়তে মনে হবে প্রদীপ হাসানই যেন তানভীর আলাদিন। কেননা প্রদীপ হাসানের লেখা নিয়ে যখন একজন পাঠক প্রশ্ন করেন, তাহলে আপনার লেখা পড়ে পাঠক কি শিক্ষা নেবে? উত্তরের প্রদীপ হাসান বললেন, ‘ভাই আমি তো শিক্ষক নই যে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেব’। ৯৬ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটি সাহিত্যদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। প্রবীর চক্রবর্তী এঁকেছেন এর শৈল্পিক প্রচ্ছদ। ব্যতিক্রমী চিন্তা ও সাহসী এ উপন্যাস আমাদের সামাজিক সম্পর্ক ও বিধি নিষেধগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে নতুন সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে নেবে এমনটাই বিশ্বাস।