২০১৯ এর ডিসেম্বরে চীনের উহানে যখন তখন-পর্যন্ত অচেনা একটা ভাইরাস দেখা দেয়, যা কয়েক মাসের মধ্যেই আমাদের চেনা পৃথিবীটাকে এলোমেলো করে দেবে, তখন বাংলাদেশের ঢাকায় বসে এক তিরিশ-না-পেরোনো তরুণ তাঁর প্রথম উপন্যাসটি লেখা শেষ করেন। বৈশ্বিক করোনা সংকটের প্রাক্কালে লেখা এই উপন্যাস। নিজের, ও লেখকের, অজান্তেই যা হয়ে উঠেছে সেই পৃথিবীর এক স্মৃতিচিহ্ন যা আর কখনোই ফিরে আসবে না। এক অসাধারণ অন্ধ সময়ের স্মৃতির কাহিনী এক যুবকের, যে তার বেড়ে ওঠার সময়টার মতই প্রাণবন্ত ও দিশেহারা। এই যুবক বাস করে ইতিহাসের অলিগলিতে, আর তা এত সর্বগ্রাসীভাবে যে, মাঝেমধ্যেই তাকে অস্বাভাবিক বলে মনে হয়। ইতিহাসের পাথরের নিচে যে চাপা পড়ে গেছে, অসম্ভব হয়ে উঠেছে যার পক্ষে একটা স্বাভাবিক জীবন যাপন করা। একইসাথে এই উপন্যাসটি বিশশতকের ইতিহাসের এক পুনঃপাঠ। যে-শতকের সব আলোর আগমনধ্বনি আর প্রগতির প্রতিশ্রুতি ছাপিয়ে গেছে যুদ্ধ আর গণহত্যা, কনসেনট্রেশন ক্যাম্প আর কিলিং ফিল্ডস। যার ব্যাপারে সুগভীর সন্দেহ নিয়ে জীবনানন্দ লিখেছিলেন, তাঁর এই সব দিনরাত্রিতে, ‘এ-আগুন এত রক্ত মধ্যযুগ দেখেছে কখনো?’ অস্বাভাবিক বলে মনে হওয়া যুবকটির সাথে বিশশতকের ইতিহাসের অলিগলিতে হাঁটতে হাঁটতে পাঠকের মনেও দেখা দিতে পারে এ-সন্দেহ। তবু মানুষ থাকে, আর থাকে তার প্রতিরোধ। উপন্যাসের যুবকটিও তাই ধবংসস্তূপ থেকে উঠে আসে, যেভাবে উঠে আসছে হাল না ছাড়া মানুষেরা, দুনিয়ার দেশে দেশে। যারা ভেঙে পড়েছিল, আর তারপর উঠে দাঁড়িয়েছিল, সেই মানুষদের জন্য লেখা হয়েছে এক অসাধারণ অন্ধ সময়ের স্মৃতি।