উনিশ শতকের সাহিত্য ও সংবাদ-সাময়িকপত্রের জগতে ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায় (১৮৪২-১৯১৬) অজ্ঞাতকুলশীল কোনো ব্যক্তি ছিলেন না। নানা কারণে তাঁর নাম সেকালের কীর্তিমান লেখক কালীপ্রসন্ন সিংহ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও মীর মশাররফ হোসেনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। ভুবনচন্দ্রকে ‘সব্যসাচী লেখক’ হিসেবে অনায়াসে চিহ্নিত করা চলে। কাব্য, গল্প-উপন্যাস, সামাজিক নকশা, প্রহসন, ইতিহাস, জীবনী, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি, অনুবাদ-সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই তাঁর ছিল স্বচ্ছন্দ বিচরণ। সংবাদ-সাময়িকপত্র সম্পাদনা-পরিচালনাতেও তাঁর কৃতিত্বের কথা উল্লেখ করতে হয়। তাঁর সারস্বত-সাধনার কৃতির কথা বলতে গিয়ে ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ‘মধুসূদন-কালীপ্রসন্ন সিংহের উত্তরসাধক’ হিসেবে ¯ §রণ করেছেন। হরিদাসের গুপ্তকথা ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সাড়া-জাগানো নকশাধর্মী উপাখ্যান। ‘আধুনিক বঙ্গের সমাজচিত্র’ নামে চিহ্নিত এই ‘গুপ্তকথা’য় বাঙালি সমাজের ধর্ম-নীতি-আচার-সংস্কারের যে-অবক্ষয় লেখকের চোখে ধরা পড়েছিল, তার বিবরণ এখানে অন্য অনুষঙ্গসহ প্রকাশ পেয়েছে। একালে বিস্মৃত, সেকালের এক কৃতবিদ্য বহুমাত্রিক লেখকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই শতবর্ষ-অতিক্রান্ত হরিদাসের গুপ্তকথা-র প্রাসঙ্গিক নির্বাচিত-অংশ প্রকাশের এই উদ্যোগ।
আবুল আহসান চৌধুরী জন্ম ১৩ জানুয়ারি ১৯৫৩ কুষ্টিয়ার মজমপুরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বিএ (অনার্স), এমএ ও পিএইচডি ৩২ বছর ধরে অধ্যাপনা পেশায় যুক্ত। বর্তমানে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। মূলত প্রাবন্ধিক ও গবেষক সমাজমনস্ক ও ঐতিহ্যসন্ধানী। অনুসন্ধিৎসু এই গবেষক সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা দুষ্প্রাপ্য ও অজ্ঞাত উপকরণ সংগ্রহ, উদ্ধার ও তা ব্যবহার করে থাকেন। তার লালন সাঁই, কাঙ্গাল হরিনাথ ও মীর মশাররফ হােসেন বিষয়ক গবেষণাকাজ দেশ-বিদেশে সমাদৃত। গবেষণায় বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৯ সালে । প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৭০।