এ সম্পাদন-কর্মটি নিয়ে দুটো কথাঃ সুকুমার! সুকুমার!! অনন্য অপরিসীম প্রতিভার ভাণ্ডার সুকুমার। সুকুমার রায় কে কেন প্রতিভার ভাণ্ডার বলছি? শোন তাহলে ছোট্টবন্ধুরা- প্রবেশিকা পাশ করার পর সুকুমার রায় রসায়নে সম্মানসহ পড়াশুনা শুরু করেন কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজে, গঠন করেন 'ননসেন্স ক্লাব'; যেখানে তিনি ছোটদের হাসির নাটক লিখছেন এবং অভিনয় করছেন। এ সুবদে তিনি রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো মহান সংস্কৃতপ্রেমীদের সাথে সহ-অভিনেতারূপে অভিনয় করেন শান্তিনিকেতনে ‘গোড়ায় গলদ নাটকে। এসময় তিনি স্বদেশী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন এবং লিখে ফেলেন স্বদেশী দ্রব্য ব্যবহার সচেতনতা নিয়ে হাস্যরসে ভরপুর গান-- ‘আমরা দিশী পাগলার দল...... দেখতে খারাপ, টিকবে কম, দামটা একটু বেশী/ তা হোক না, তাতে দেশেরই মঙ্গল। এবং বনে যান গীতিকার। ইতিমধ্যে তিনি বি.এসসি পাশ করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফোটোগ্রাফী’ ও ‘প্রিন্টিং টেকনোলজি-তে স্কলারশিপ নিয়ে চলে যান বিলেত। বিলেতে অবস্থানকালে East and west Society-র আমন্ত্রণে প্রবন্ধ পাঠ করেন, পেয়ে যান বক্তা খ্যাতি এবং নানা সভা-সমাবেশে বক্তৃতার জন্য নিমন্ত্রণ পেতে থাকেন। এসময় পিতৃপ্রতিষ্ঠিত 'সন্দেশ' পত্রিকার প্রায় প্রত্যেক সংখ্যায় পাঠাতে থাকেন গল্প, কবিতা ও নিজের আঁকা ছবি... তাইতো তিনি যেমন লেখক তেমনি চিত্রশিল্পী। দেশে ফিরেই বাবার ব্যবসায় যোগ দেন, সঙ্গে গুণীমণ্ডলীদের নিয়ে গঠন করেন 'মানডে ক্লাব'। এ ক্লাবে আলোচনা ও পাঠের সঙ্গে আয়োজন থাকত প্রচুর ভূরিভোজের, তাই লোকে ঠাট্টা করে এ ক্লাবের নাম রেখেছিল 'মস্তা ক্লাব। সুকুমার রায় তাঁর গল্প, কবিতা ও নাটকে উজ্জ্বল কৌতুক রসের মাধ্যমে সূক্ষ্ম ব্যঙ্গাত্মত্মক সমাজসচেতনতাকে তুলে ধরেছেন অত্যন্ত নিখুঁতভাবে। আবার বাংলা ও ইংরেজিতে বেশকিছু গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ রচনা করে রেখেছেন মাতৃভাষা বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষাতেও মুনশিয়ানার সাক্ষর। তাহলে দেখা যাচ্ছে, তিনি একদিকে যেমন ছড়াকার, গীতিকার, প্রাবন্ধিক ও চিত্রশিল্পী অন্যদিকে তেমনি অভিনেতা, বক্তা, ফোটোগ্রাফার, আন্দোলনকারী ও সমাজসংস্কারক।