বাংলা সাহিত্যে পেনশন নিয়ে নানা গল্প উপন্যাস আছে। কোনো গল্পই সুখকর নয়। বিশেষ করে চাকরি জীবন শেষে পেনশনের টাকার দিকে পরিবারের সবাই তাকিয়ে থাকে। মোমিন সাহেব এরকমই একজন সরকারি চাকুরে। অনেক কষ্টে পেনশনের টাকা উদ্ধার করার পর তার সখ হয় গ্রামে গিয়ে নিবাস গড়বেন। কিন্তু স্ত্রী ও পরিবারের সবাই চায় শহরে নিবাস হবে। অনেক মতবিরোধ, অনেক টানাপোড়েন। এক সময় সখের বশে ভিক্ষাবৃত্তি করার পরিকল্পনাও মাথায় আসে মোমিন সাহেবের। কিন্তু পরিবার ও অফিসের পূর্বতন কলিকদের প্রতিরোধের মুখে সে তার ভিক্ষাবৃত্তি ত্যাগ করে। ছোট ভাইয়ের বাড়িতে যান, সেখানেও তার শান্তি মেলে না। কিন্তু প্রথম জীবনে পিতার অবর্তমানে মোমিন সাহেব ছোট ভাইদের মানুষ করেন। প্রতিদান অকৃতজ্ঞতার। আমরা বাঙালি সমাজ শুধু নই, পৃথিবীর নানা দেশে নানা বেশে প্রকৃত সজ্জন মানুষ যে প্রতারিত হয় তাতে সন্দেহ কি? পরবর্তীতে মোমিন সাহেব তার ইচ্ছানুযায়ী নিবাসের কাজ শেষ করেন। এই কাহিনীর মধ্যে কোথায় যেন লেখকের নিজের জীবন লুকিয়ে আছে। কোথায় যেন নিজের ভালোবাসাকে অপাত্রে রাখার বেদনা লুকিয়ে আছে। আমরা শরৎচন্দ্রের লেখায়, রবীন্দ্রনাথের অনেক গল্পে এই সামাজিক টানাপোড়েন দেখতে পাই। স্বজনের আঘাতে বেদনার অশ্রæ দেখতে পাই। আমাদের চলচ্চিত্রে পেনশন নিয়ে অনেক ঘটনা এবং তা হৃদয় বিদারক। সম্প্রতি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পেনশন প্রাপ্তিকে সহজতর করা হয়েছে। আসলে কি তা সহজ। শুনেছি এখনো অনেকের ভোগান্তি। আর পেনশনের টাকা পাওয়ার পর আপনজনদের নানা দাবি। ভারতীয় চ্যানেলগুলোতেও এই সমস্যার রূপায়ণ দেখি। তবে লেখক মন্টু চৌধুরী তার সহজ ও সুললিত ভাষাভঙ্গি দিয়ে অপূর্ব দক্ষতায় বুনেছেন চরিত্রগুলোর ভ‚মিকা। সমাজের একটা ছবি এঁকে দিয়েছেন আমাদের চোখের সামনে। এটি তার তৃতীয় উপন্যাস। নামকরণ ‘নিবাস’। কাহিনী বয়নের দক্ষতা, উত্থান-পতন, আশা-নিরাশা উপন্যাসটির গতি বাড়িয়েছে। পাঠক নিজের চেনা জগতকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে পারবেন। ‘নিবাস’-এর মধ্যে যেন আমাদের নির্বাসিত ঠিকানাও লেখা আছে। উপন্যাসটির বহুল প্রচার চাই। রেজাউদ্দিন স্টালিন