পটভূমি ‘নিজেকে অভিজাত মনে হয়’ বইটি লেখার শুরুতে আমার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা ছিল না। আমি কবি বা সাহিত্যিক নই। তাই শুধু কল্পনা দিয়ে আমি কিছু লিখতে পারিনে । চারপাশে যা কিছু ঘটে, নিজে যা কিছু দেখি বা শুনি–সে সব দেখা বা শোনার মধ্যে যে চিন্তা আমার মাথায় ঘুরপাক খায়–আমি তাই নিয়ে লিখি। এ কারণে আমার লেখা একান্ত সাদামাটা। অসাধারণ কিছু নয়। তবে আপনার আমার সবার চিন্তার একটি সরল প্রকাশ আমার লেখায় পাওয়া যায় বলে আমার নিজের মনে হয়। শহুরে জীবনের একটি বড় অংশ আমি ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় থেকেছি। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে আমি ইস্কাটনে বাসাবদল করি। এখানে আমার যাতায়াতের জন্য গাছের সবুজ ছায়ায় ঢাকা পাখি ডাকা রাস্তাটির নাম ইস্কাটন গার্ডেন। অদূরে ছায়া সুনিবিড় নয়নাভিরাম রমনাপার্ক। মানুষের থাকার জায়গা যে তার চিন্তাচেতনায় অনেক বড় প্রভাব ফেলে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় আমার এখানকার লেখা থেকে। এখানে আসার এক মাসের মধ্যেই আমার লেখা ‘নিজেকে অভিজাত মনে হয়’-এর প্রথম পর্ব ফেসবুকে এবং অস্ট্রেলিয়ার সিডনী থেকে অনলাইন পত্রিকা বাংলাকথাডটকমে প্রকাশিত হয়। কয়েকটি লেখা প্রকাশিত হবার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র আমার সাথে দেখা করেন। তাঁরা আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার ইতিহাস লেখার জন্য অনুরোধ জানান। তাঁরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলেও, এখানকার কোনো ইতিহাস তাঁদের জানা নেই। এভাবে কোনো লেখা বইও তাঁরা পান না। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অবস্থিত ঐতিহাসিক তিন নেতার মাজারে কোন তিন নেতা সমাহিত হয়েছেন, সে কথাও তাঁদের অনেকে জানেন না। বলা যায়, তাঁদের অনুরোধেই বইটি ইতিহাস নির্ভর করার চেষ্টা করি আমি। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র নই এবং ইতিহাস লেখার তেমন যোগ্যতাও আমার নেই। কেবল ইতিহাসের একজন পাঠক এবং সচেতন নাগরিক হিসেবে সাধারণ জ্ঞান দিয়েই বইটি লেখা শুরু করি। তবে এটি ইতিহাসের প্রমাণক কোনো গ্রন্থ নয়। তাই, কোনো স্পর্শকাতর বিষয় ছাড়া বইটিতে তেমনভাবে তথ্যসূত্র ব্যবহার করা হয়নি। বইটিতে বর্ণিত অনেক ঐতিহাসিক খুঁটিনাটি বিষয় আমার নিজেরও জানা ছিল না। ইন্টারনেট ঘেঁটে আমাকে জানতে হয়েছে। আমি মনে করি, কোনো পাঠক ঐতিহাসিক কোনো ঘটনা বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হলে আমার মতো একইভাবে জানতে পারবেন। বাঙালি জাতিসত্তা বা বাঙালি গৌরবগাথার ইতিহাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি তথা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে স্বীকৃত। নিজেই অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী তিনি। সংগত কারণেই বইটিতে শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের অনেক উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছে। বাঙালির গর্ব এই অকুতোভয় দেশপ্রেমিক মহান নেতার প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। মহান আল্লাহ তাঁকে বেহেস্তের সুউচ্চ মর্যাদায় আসীন করুন। শিক্ষা ব্যবস্থাপক, কবি ও গবেষক ড. সাঈফ ফাতেউর রহমান বইটির একটি পর্যালোচনা লিখে বইটিকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। বইটিতে প্রদর্শিত প্রায় সকল ছবিই আলোকচিত্রী সোহেল ইমরান নিজে তুলেছেন । তবে কয়েকটি ছবি কিনতে হয়েছে । এ প্রজন্মের তরুণ লেখক মিকসেতু মিঠু বইটির ছবি সংগ্রহ ও যথাযথ বিন্যাসে আন্তরিক সহযোগিতা দিয়েছেন। তাঁদের দুজনকেই ধন্যবাদ। ইছামতি প্রকাশনীর জনাব মোহাম্মদ রশিদুর রহমান বইটি প্রকাশের দায়িত্ব নিয়ে আমাকে চিন্তামুক্ত করেছেন। তাঁর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। সম্মানিত পাঠকগণের সুচিন্তিত মতামত এবং অনুপ্রেরণার ফসল এই ‘নিজেকে অভিজাত মনে হয়’ বইটি। তাই সম্মানিত সকল পাঠকের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। বইটি নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের নিজের দেশকে জানার আগ্রহ বাড়াবে এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে–এটাই প্রত্যাশা। বাংলাদেশ চিরজীবী হউক। রাশেদুল ইসলাম লেখক