আজকাল একটা দুঃস্বপ্ন তাড়া করছে ভীষণ, আটলান্টিকের পার ধরে একা হাঁটছি আমি, উড়িয়ে নেওয়া বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ আর পায়ের কাছে প্রকাÐ ঢেউ আছঢ়ে পরার শব্দে চমকে উঠছি বারবার আর ভাবছি এই বিশাল বিশ্বভ্রম্মাÐে আমি কতই না ক্ষুদ্র, আমার ভাবনার জগৎ, আমার বিচরণের ক্ষেত্র কতই না সংকীর্ণ! এই বিশাল বিশ্বভ্রম্মাÐের কতটুকুই বা দেখেছি, কতটুকুই বা জেনেছি আমি! মনটাতো আমার জীবনভরই নাটাই ছেড়া ঘুড়ি। মনে মনে কখন যে টিকাটুলি থেকে পিকাডেলি কিংবা হাতিয়া থেকে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে হারিয়ে যাই নিজেও জানিনা। তিতাসের পার ধরে হাঁটতে হাঁটতেই কল্পনায় চলে যাই ইউরোপের রাইন, সিন, ভল্গা, টেমস কিংবা দানিউব নদীর পারে, কখনোবা আমেরিকার আমাজন, হাডসন, মিসিসিপি কিংবা মিশরের নীল নদের তীরে। কল্পনায় মেক্সিকো থেকে মরক্কো কিংবা কানকুন থেকে কাসাব্লাঙ্কা কতই না ঘুরে বেড়াই! কখনোবা চলে যাই হুররম সুলতানের খোঁজে ইস্তাম্বুল, কখনোবা হেলেনের খোঁজে ট্রয় নগরীতে, আবার কখনো বনলতা সেনের খোঁজে নাটোরে। প্যারিস থেকে ব্রাসেলস, আন্টর্পেন থেকে আমস্টারডাম এর অলিগলি চষে খুঁজে বেড়িয়েছি রেনোয়া, মোনে, দেগা, পিকাসো আর ভ্যানগগের মত মহান শিল্পীদের বিশ্বখ্যাত শিল্পকর্ম তবুও তেষ্টা মেটেনি। দেখেছি পাখির ডানায় চড়ে দুধের সাগরে ভাসমান শুভ্র ঝলমলে হিমালয় রেঞ্জ, পাখির চোখে এভারেস্ট দেখে এভারেস্টের প্রেমে পরে সেই তেষ্টাকে বাড়িয়েছি বহুগুণ, গুলমার্গের বরফে মোড়ানো আপারওয়াথ চ‚ড়ায় উঠে সেই দুধের স্বাদ যেন ঘোলে মিটিয়েছিলাম কিঞ্চিৎ। ঘুমের ডানায় চড়ে পৃথিবীর এমাথা থেকে ওমাথা ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত আমি যখন ঘুম থেকে জেগে উঠি তখন মনে হয়-বহুদিন কোথাও যাওয়া হয় না! আবার মুসাফির পথে নামো, আমাদেরতো দেখা হয় নাই কিছুই, আরও কত কিছু দেখা বাকি। ভ্রমণ পিয়াসি উদাসী মন কেবলি তাকিয়ে রয় নতুন পথের দিকে। ভ্রমণকে যারা বলে বিলাসিতা বা অযথা পয়সা নষ্ট, আমি তাদের দলে নই। ‘সংবিধিবদ্ধ সতর্কবাণী: ভ্রমণ চিপ্পুসদের জন্যে নয়’। আকাশের মতো বিশাল যাদের মন তাদের জন্যই ভ্রমণ। বেড়াতে চাইলে বেড়িয়ে পড়–ন। সব বিনিয়োগের তাৎক্ষণিক ফল পাওয়া যায় না। অত চিন্তা করেও কোন কাজ নেই। বেড়ানোর জন্য টাকা হয়তো লাগে তার চেয়ে বেশি লাগে মন। আর এই মনের প্রশান্তির জন্যইতো বেড়াতে যাওয়া। এই যান্ত্রিক জীবনে আমাদের নিজস্ব সময় বলতে কিছু নেই। স্বপরিবারে বেড়াতে যান, জীবনসঙ্গীকে, সন্তানদেরকে কোয়ালিটি টাইম দিন, এর মূল্য টাকায় পরিমাপ করা যাবে না। আর ভ্রমণ থেকে লব্ধ জ্ঞান কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে অর্জন করা সম্ভব নয়। আমি আদার ব্যাপারী ঘুরাঘুরির বেরাম আছে, সাধ অনেক সাধ্য সীমিত। তাই কম খরচে ভ্রমণের যত তরিকা আমার জানা, সেই অভিজ্ঞতা থেকে কিছুটা বর্ণনা করলাম ভ্রমণ পিপাষুদের কাজে আসলেও আসতে পারে।
কামরুল হুদা, ডাক নাম বাদল। জন্ম ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৭, ঢাকা। পিতা মরহুম আবু মোঃ জাকির হুসেন, মাতা মরহুম নাজমুল লায়েল খানম। আট ভাই এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। পড়াশুনা তেজগাঁও পলিটেকনিক হাই স্কুল, ঢাকা।সরকারী তিতুমীর কলেজ, ঢাকা এবং স্নাতক বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ব্যাংকার, ৩৫ বছর চাকুরী শেষে বর্তমানে অবসর জীবন। স্ত্রী দিলরুবা সুলতানা সহপাঠী ও ব্যাংকার, অবসর জীবন। ছেলে অধিপ খাইরুল বাশার, কানাডা প্রবাসী, নাতি আহিল। মেয়ে অর্চি ফারহানা হুদা, ফার্মাসিস্ট ও চাকুরিজীবি, দুই নাতি আফফান ও মুসাব। ১৯৭২ থেকে লেখালেখি শুরু। মূলত শিশু কিশোরদের জন্য লেখা। ছড়া, কবিতা, গল্প,কল্প বিজ্ঞান এবং প্রবন্ধ পূর্বদেশ, দৈনিক বাংলা,ধান শালিখের দেশ, টাপুর টুপুর, নবারুণ,শিশু সহবিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। ১৯৮১ সালে জুলে ভার্ন এর‘দি মিস্টেরিয়াস আইল্যান্ড’এর সংক্ষিপ্ত অনুবাদ ‘রহস্যময় দ্বীপ’ বাংলা একাডেমী থেকে এবং ২০২১ এ এই বইয়ের বর্ধিত সংস্কবণ সহ ভিন্নধর্মী কবিতার বই ‘ঘোড়া ও গাধা’ প্রকাশিত হয়েছে। এর বাইরে বাৎলাদেশের ডাকটিকেট ও কারেন্সি সংগ্রহের সখ। দ্বিতীয় বাংলাদেশ জাতীয় ডাক টিকেট প্রদর্শনী ১৯৯২ এ বাংলাদেশ বিভাগে ‘ইনসেনটিভ’ পুরস্কার প্রাপ্ত। বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (সায়েন্স ফিকশান) ‘অতল সমুদ্রে’-এর এই ২২৩ পৃষ্ঠার বিস্তারিত অনুবাদে প্রতি অধ্যায়ে রয়েছে বিজ্ঞানের রহস্য, আবিষ্কারের রোমঞ্চ এবং অভিযাত্রিকের সাহসী অভিযানের অভিজ্ঞতা।