এই সিরিজটি মূলত আধুনিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ইসলাম সম্পর্কে প্রজ্ঞার সাথে জানা ও জানানোর একটা প্রচেষ্টা। যেন, বর্তমানের এত বিভ্রান্তি ও দ্বিধাদ্বন্দ্বের মাঝেও ইসলামের শক্তিশালী বয়ান আমাদের মাঝে পষ্ট হয়ে উঠে, ইসলাম পালনের ক্ষেত্রে আমাদের মাঝে তৈরি হয় আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তা। উস্তাদ নোমান আলী খান বিস্তৃত শাখার জ্ঞানের আলোকে কুর'আন ও ইসলামকে উপস্থাপন করেন। ফলে তার জ্ঞানের আসল শক্তি হয়ে দাঁড়ায় যুগের নতুন সমস্যা ও প্রেক্ষাপটে ইসলামের প্রজ্ঞাময় শক্তিশালী বয়ান হাজির করা। এজন্য আমাদের অজ্ঞতার প্রলেপে আস্তরিত জ্ঞান ও অদৃঢ় ঈমানের সমস্ত অবিশ্বাস ও অপলাপ দূর হয়ে ভেতরের আসল শক্তি প্রকাশিত হয়। এই শক্তি তখন আলোয় রুপান্তরিত হয়, পথ দেখায় আপনকে, আশপাশের সমস্তটাকে। নোমান আলী খান সমাজের অন্য আট-দশজনের মতো বড় হয়েছেন। এই যুগের সাধারণ মানুষ কিভাবে কথা বলে, কী কী সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আর পাশ্চাত্য দর্শনের প্রভাব কিভাবে মুসলিমের মনে সমস্যা সৃষ্টি করে—এগুলো তিনি নিজেই অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছেন। জীবনের এক পর্যায়ে কট্টর নাস্তিকও ছিলেন। দর্শন পড়তেন শুধু এই কারণে যে কিভাবে দর্শন দিয়ে ধর্মকে আঘাত করা যায়। এরপর যখন দ্বীনের পথে এসেছেন, তিনি বলেছিলেন দর্শন থেকে আসা তার সকল দ্বিধাদ্বন্দ কুর’আন একে একে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে, যার একটিও অবশিষ্ট্য নেই। এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তিনি অন্ধকার থেকে উঠে এসে লাখো মানুষের অন্তরকে আলোর পথ দেখাচ্ছেন। সেসব আলোর বিচ্ছুরণ এই গ্রন্থের প্রতিটি লেখা।
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন লেখক এবং ইসলামি বক্তা নোমান আলী খান এর বই সমূহ ধর্মীয় যুক্তিতর্কের জন্য মুসলিমদের নিকট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তার ‘ডিভাইন স্পিচ: এক্সপ্লোরিং কুরআন অ্যাজ লিটারেচার’ বইটি মুসলিম বিশ্বে বেশ আলোড়ন তোলা একটি বই। এ বই তাকে লেখক এবং ধর্মীয় যুক্তিবিদ হিসেবেও খ্যাতি এনে দিয়েছে। বর্তমানে তিনি ‘দ্য বাইয়্যিনাহ ইন্সটিটিউট ফর অ্যারাবিক অ্যান্ড কুর'আনিক স্টাডিজ’ এর সিইও এবং প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৬ সালে তিনি এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। আমেরিকান মুসলিদের নিকট তুমুল জনপ্রিয় এ বক্তা তার ইসলামিক জ্ঞান এবং যুক্তি-তর্কের দ্বারা মুসলিম বিশ্বের অন্যতম পরিচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। ইসলামিক ব্যক্তিত্বদের জীবনীভিত্তিক ‘দ্য ফাইভ হান্ড্রেড মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল মুসলিমস’ এর তৃতীয় সংস্করণে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিমদের একজন হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। নোমান আলী খান ১৯৭৮ সালে পূর্ব জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সেসময় পাকিস্তানি কূটনীতিক হিসেবে জার্মানিতে কর্মরত ছিলেন। বাবা-মা উভয়েই পাকিস্তানি হলেও নোমানের পাকিস্তানে বেশি দিন থাকা হয়নি। বাবার কর্মস্থল পরিবর্তনের কল্যাণে সৌদি আরবে ৬ বছর বসবাস করার পর আমেরিকায় চলে আসেন নোমান। এরপর থেকে আমেরিকাতেই থাকছেন এই ধর্মীয় বক্তা। ধর্মীয় শিক্ষায় তার হাতেখড়ি হয়েছিল সৌদি আরবেই। এরপর আমেরিকাতেই তিনি চালিয়ে গেছেন ক্লাসিক্যাল আরবি শিক্ষা। বর্তমানে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাসে বসবাস করছেন তিনি। নোমান আলী খান বাংলা বই লেখেননি, তথাপি তার ‘ডিভাইন স্পিচ’ এবং ‘রিভাইভ ইয়োর হার্ট’ সহ বেশ কিছু বই বাংলায় অনূদিত হয়েছে। এছাড়াও, ‘প্রশান্তির খোঁজে’ এবং ‘বন্ধন’ বইগুলোও রয়েছে নোমান আলী খান এর বই সমগ্রতে।