ফ্লেপ এবং লেখক পরিচিতি / শাওয়ার অব মেমোরি কিছু কিছু মায়ায় মোড়ানো লেখা থাকে যা পড়লে মন প্রাণ আনচান করে, উন্মুখ হয়ে ওঠে। মোহাম্মদ আবুল বাসার লিটনের স্মৃতিগদ্যের অনুপম সঙ্কলন 'শাওয়ার অব মেমোরি' সেরকম এক বই। এ বই পড়তে গিয়ে অদ্ভুত এক আবেগের মধ্যে নিপতিত হয়েছি আর ভেবেছি, এক জীবনে বেঁচে থাকার জন্যে মানুষকে কত কত অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়েই না সাঁতার কাটতে হয়! এই লেখকের লেখার মধ্যে আলাদা এক ধরণের ঘ্রাণ রয়েছে যেখানে পাঠক অনায়াসে নিজের ফেলে আসা জীবনের নানা পর্বকে, নানা উপাখ্যানকে মিলিয়ে ফেলতে পারেন অনায়াসে। লিটনের লেখার বড় সম্পদ তার লেখায় ঘুরে ফিরে আসে বিচিত্র রঙের মানুষ, বিচিত্র ঢঙের মানুষ। 'শাওয়ার অব মেমোরি' গ্রন্থে বহু রঙে, বহু ঢঙে বর্ণিল হয়ে উদ্ভাসিত হয়েছে পুরান ঢাকা, অভয় দাশ লেনের গলি, দয়াগঞ্জ, সায়েদাবাদ, গোলাপবাগের বস্তি, ট্রেন লাইনের পাশের ছিন্নভিন্ন বস্তি জীবন আর এর প্রাণ প্রাচুর্যময় জীবন, পদ্মাপাড়ের বিক্রমপুরের ছোট্ট গ্রাম গোপালপুর, দুঃখকষ্টে ছাওয়া নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার, পরিবারের কাছের দূরের আত্মীয়স্বজনের বিচিত্র সম্পর্ক, দেশ-দেশান্তরের বর্ণিল মানুষ, সংস্কৃতি আর তাদের বৈচিত্রময় জীবন জীবিকার নানা অনুষঙ্গ। নির্মম অভিজ্ঞতা। লেখকের নিজস্ব ঢঙ এবং অনায়াস গদ্যের বয়ানে স্মৃতির চাদরে মোড়ানো এই গ্রন্থে পাঠক তার নিজের জীবনের নানা অলিন্দে অবগাহন করবেন বলে আস্থা রাখি। ধ্রুব এষ লেখক পরিচিতি মোহাম্মদ আবুল বাসার লিটন জন্ম ১৯৭৩, পুরান ঢাকায়। শৈশবের একটা বড় অংশ কেটেছে ঢাকায়, কিছুটা সময় নানী বাড়ি বিক্রমপুরের গোপালপুরে। মধ্যবিত্তের টানাপড়েন আর দুঃখ-কষ্ট দেখে দেখে বেড়ে ওঠা। জীবনের শুরুতেই ইচ্ছেয় অনিচ্ছেয় মুখোমুখি হয়েছেন নানান বিচিত্র অভিজ্ঞতার, কাহিনির। নবাবপুর স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে ঈগলের মতো যৌবন নিয়ে পড়াশোনার জন্যে অস্ট্রেলিয়া- সেখানে বারো বছর। ভ্রমণ, বিচিত্র মানুষ দেখার আকাংখা আর ততোধিক বিচিত্র অভিজ্ঞতা নেয়ার প্রতি রয়েছে জন্ম-জন্মান্তরের লোভ। এই লোভ তাঁকে করেছে লোভাতুর, টেনে নিয়ে গেছে যত্রতত্র। এক যুগে ভ্রমণ করেছেন অর্ধেক পৃথিবী। অস্ট্রেলিয়ার পাঠ চুকিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য বেঁছে নেন মধ্য ইউরোপের ছবির মতো দেশ চেক রিপাবলিককে। স্ত্রী পেত্রা, এক পুত্র রায়ানকে নিয়ে চেক-সুইজারল্যান্ড ন্যাশনাল পার্কের কাছে ইরিকভ নামের এক স্বর্গ উদ্যানে সুখের সংসার। অবসরে ভ্রমণ, বই পড়া, গান শোনা, রান্না করা আর শখের বাগান করাকে ভীষণ উপভোগ করেন। পেশা হিসেবে পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। ব্যবসা, সংসার কিংবা জীবনযাপন সবক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক ছায়া হিসেবে স্ত্রী'র সঙ্গ আর উপস্থিতি তাকে স্বস্তি দেয়। জীবনকে চা পান করার মতো তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে পারার দুর্দান্ত দুঃসাহস রাখেন এই লেখক। প্রকাশিত গ্রন্থ প্রেমের দ্বীপ তাহিতি ( ২০১৮ ) উৎসর্গ লুৎফর রহমান রিটন প্রিয় অগ্রজ,বাংলা ছড়ার রাজপুত্র- যে মানুষটার দুই পায়ে প্রণতি দেবার আকাঙ্ক্ষা আমার শৈশব থেকে। প্রতিটি মুহূর্তে যে মানুষটার অদৃশ্য ছায়া আমার মাথার ওপরে অনুভব করি। অনুভব করি তাঁর আশীর্বাদ, তাঁর স্নেহ...