ম্যাক্সিম গোর্কি বলেছেন, ‘ছোটোদের জন্য গল্প উপন্যাস ও শিক্ষামূলক সাহিত্য রচনায় আমাদের সাফল্য নির্ভর করে কীসের ওপর? প্রথমে আমাদের প্রয়োজন সেইসব প্রতিভাবান লেখক, যাঁরা সহজ, সরস ও অর্থপূর্ণ রচনা তৈরির ক্ষমতা রাখেন। তারপর চাই সংস্কৃতিমান সম্পাদক, যাদের সাহিত্য ও রাজনীতিতে যথাযথ প্রশিক্ষণ থাকে এবং সর্বোপরি প্রয়োজন শিশুপাঠ্য গ্রন্থাবলি যথাসময়ে এবং যথোচিত উৎকর্ষে সমৃদ্ধ করে প্রকাশের নিশ্চয়তা বিধানের কারিগরি সুযোগসুবিধা।’ শিশুসাহিত্য রচনার অন্যতম প্রধান শর্ত হলো সহজ ও আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন। ছোটোদের মনে কৌতূহল সঞ্চার করা এবং তাদের নরম, কোমল ও আনন্দময় মনকে উজ্জীবিত করার জন্য সহজ ও আকর্ষণীয় রচনার বিকল্প নেই। এর মধ্যেই নিহিত আছে চিরায়ত সাহিত্যগুণ। শিশুসাহিত্য এমন এক মননপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় যা লেখকের জন্য শ্রমসাধ্য হলেও তার প্রকাশ সাবলীল ও প্রাণবন্ত। শ্রম, চেষ্টা ও প্রতিভার সমন্বয়ে সৃষ্টি হতে পারে এমন অভাবনীয় সাহিত্য। ওমর কায়সার এমন এক লেখক, যিনি ছোটোদের উপযোগী সাহিত্য রচনায় দক্ষ ও কুশলী কারিগর। শিশু মনস্তত্ত্ব আয়ত্তে নিয়েছেন অনেক আগেই। শিশুসাহিত্য যেন শিশুর আনন্দসঙ্গী হয়ে ওঠে, তার জন্য তিনি মেধা আর শ্রম দিয়ে চলেছেন নিরবচ্ছিন্নভাবে। তিনি মনে করেন, শিশুসাহিত্য শিশুর মানসিক খাদ্য। এই খাদ্য তার মনকে করে সতেজ ও সবল। শিশুর স্বপ্ন ও কল্পনাশক্তির বিকাশে উপভোগ্য শিশুসাহিত্যের কোনো বিকল্প নেই। ওমর কায়সার সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় স্বচ্ছন্দ ও নিবেদিত হলেও শিশুসাহিত্য রচনায় আমরা তাঁর বিশেষ দরদ ও দক্ষতা লক্ষ করি। তাঁর সে এক আশ্চর্য বাতি অসাধারণ এক বই। কিশোর মনে মুক্তমন, উদার চিন্তা ও স্বাধীনচিত্ততার জাগরণ তুলতে অদ্ভুত ও বিস্ময়কর বই এটি। কবিতায় তিনি যেমন সমাজের কথা বলেন, সৌন্দর্যের কথা বলেন, তেমনি ছোটোদের উপযোগী লেখায় তুলে ধরেন স্বপ্নের কথা। তাঁর প্রতিটি উচ্চারণ খুবই স্পষ্ট, অর্থবহ ও গভীর। রচনার প্রকাশভঙ্গি, বিষয়-বৈচিত্র্য ও বক্তব্যের অসাধারণ উপস্থাপনায় তিনি ভাস্বর। তিনি গড়ে তুলেছেন নিজস্ব ভুবন। সুস্থ শিশু বলতে শুধু শারীরিকভাবে সুস্থ শিশুকেই অনেকে বুঝে থাকেন। যদিও শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবে শিশুকে সুস্থ রাখা জরুরি। মানসিকভাবে সুস্থ না হলে শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়। আমি মনে করি, শিশুর মানসিক বিকাশে ওমর কায়সারের গল্পের বইটি বড় সহায়ক হতে পারে। রাশেদ রউফ সহযোগী সম্পাদক, দৈনিক আজাদী