বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত ভাষাগুলোর মধ্য্ ‘আলোকচিত্র’ একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশ মাধ্যম হিসেবে বহুল ব্যবহৃত। কেননা সমগ্র বিশ্বের মানুষ আজ এই ভাষা বোঝে এবং প্রচলিত অন্য ভাষাগুলোর মধ্যে আলোকচিত্র যে সুনির্দিষ্ট ও সুবিন্যস্ত অভিব্যক্তি বহন করে তার ব্যাপকতা অনেক বেশি। এর অন্যতম কারণ আলোকচিত্র একদিকে যেমন ইতিহাস সংরক্ষণ করে অন্যদিকে স্থান-কাল-গোষ্ঠী ভেদে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবেও পরিগণিত হয়। শৌখিনতা থেকে শুরু করে নিজেকে একজন দক্ষ আলোকচিত্রী বা ফটোসাংবাদিক হিসেবে গড়ে তুলতে কিংবা একজন দক্ষ সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবেও যদি দেখতে চাই তা হলে তার যাত্রা শুরু হয় আলোকচিত্র থেকেই। সেই দুইশ বছর আগে স্থায়ী সংরক্ষণের মাধ্যমে পোক্ত যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে আলোকচিত্রের সাথে যুক্ত হয়েছে ইতিহাস, সাহিত্য, কবিতা, ভিডিও, দর্শন, গবেষণা, সংগীত, নৃত্য, সিনেমা, নৃবিজ্ঞান, শারীরবিদ্যার মতন গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমগুলো। ফলে আলোকচিত্র আজ শুধুমাত্র একটি ভাব প্রকাশ মাধ্যমের মধ্যেই আর সীমাবদ্ধ নেই বরং পরিণত হয়েছে একটি উৎকৃষ্ট শিল্প মাধ্যম হিসেবে। ২০২১-২২-২৩ সালের মতন আলোকচিত্রের অতি পরিণত একটি সময়ে এসে এমন একটি শিল্প মাধ্যম চর্চার যে যাত্রার শুরু তা আসলেই ‘কোন জায়গা’ থেকে করা উচিত সেই সকল চিন্তা-ভাবনা-পরিকল্পনা-বিষয়বস্তুগুলো মাথায় রেখে রচিত হয়েছে এই বই। এই পাঠ পুনঃঅধ্যয়ন এবং পর্যাপ্ত অনুশীলনের মাধ্যমে যে কেউ নিজেকে গড়ে তুলতে পারবেন আদর্শ আলোকচিত্রের ছাত্র বা ছাত্রী হিসেবে।
নিজেকে সাহিত্য ও আলোকচিত্রের আজীবন ছাত্র হিসেবে পরিচয় দেয়া শাহরিয়ার খান শিহাব নিয়মিত লেখালেখি ও কাব্যচর্চার পাশাপাশি নিয়োজিত রেখেছেন ছবি তোলার চর্চায়। পেশায়ও তিনি একজন আলোকচিত্রী। অধ্যয়ন করেছেন ঢাকার পাঠশালা―সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইন্সটিটিউটের ফটোগ্রাফির প্রফেশনাল প্রোগ্রামে। সেই প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় লিখলেন আলোকচিত্রের ওপরে ‘আলোকচিত্রের প্রারম্ভ’ বইটি। এটি আলোকচিত্রের ওপর রচিত তাঁর প্রথম বই। শাহরিয়ারের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। তাঁর ‘গ্রিন টু ব্যারেন অ্যান্ড বিং’ শিরোনামের ফটোস্টোরিতে যেমন দেখা যায় কী করে বাংলাদেশের উখিয়ায় সংরক্ষিত বিশাল এক বনাঞ্চলকে উজাড় করে তৈরি করা হয়েছে কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির, একইভাবে তাঁর কাজে উঠে এসেছে সিলেটের ভোলাগঞ্জের পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলনের করুণ এক ধ্বংসযজ্ঞের গল্প ‘ইরোশোনাল এক্সিস্টেন্স’। একইভাবে দেখা যায় কীভাবে এবং কেন চায়নার একটি এথনিক গ্রুপ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ‘দ্য বেল ফ্রম কোল্ড মাউন্টেইন’ কাজে। প্রকৃতিকে খুব কাছে থেকে অনুভব করা শাহরিয়ার ক্যামেরা আর কলমের ভেতর কোনো পার্থক্য খুঁজে পান না বলেই হয়তো তাঁর লেখা গল্প, উপন্যাস ও কবিতায় যেমন উঠে আসছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ঘটনা প্রবাহের গবেষণাধর্মী ইতিবৃত্ত, তেমনি তাঁর তোলা ছবি শাসক ও শোষণের, জীব ও জীবনের গল্প বলে যাচ্ছে অনবরত। তিনি বেশকিছুকাল ধরে লিখছেন জাতীয় পত্রিকাগুলোতেও।