"সঙসপ্তক কাহিনি" বইটির 'অনুবাদকের কথা' অংশ থেকে নেয়াঃ এ বইয়ে বুঝি মহাভারতে উল্লিখিত সংশপ্তক বাহিনীর সূত্র ধরে গল্প বলা হচ্ছে? ফিনল্যান্ডের যে সাত ভাই এই অনূদিত উপন্যাসের নায়ক, তাদের সঙ্গে মহাভারতের ওই দৃঢ়সংকল্প সাহসী যোদ্ধাদের কিছু মিল সত্যিই পাওয়া যায়। কিন্তু ও আর দন্ত্য স দিয়ে “সপ্ত–সপ্তক” বানান কেন? বানানটার কাজ হলো মনে করিয়ে দেওয়া যে ওই সাতজন তরুণকে ঠাট্টা করবার জন্যে শত্রুরা যে গান বেঁধেছিল তাতে ওদের বলা হয়েছিল সাতটা সঙ। লোকজনের নির্মম হেনস্থা গায়ে মেখে ওরা জীবনযুদ্ধে এমন রণনীতি বেছে নিয়েছিল যাতে বিদ্রুপের জবাব দিতে পারে। শত্রুদের চোখে চোখ রেখেই ওদের সেই অভাবনীয় জয়যাত্রা, যেটার গুণে এই উপন্যাস বিশিষ্ট সার্থকতা অর্জন করেছে। মূল বইয়ের নাম ছিল “সাত ভাই”। সে নাম পালটে নেবার কারণ, বাঙালি আবহে "সাত ভাই" শুনলেই চম্পা বা পারুল বোনের কথা মনে পড়ে। নতুন নামকরণে যে মহাভারতের অনুষঙ্গ চলে এসেছে, ভালোই হয়েছে। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে জীবনযুদ্ধে জিতবার গল্প ফিনল্যান্ডের সাহিত্যসম্রাট আলেক্সিস কিভি যে রীতিতে সাজিয়েছেন তার সঙ্গে ভারতীয় পৌরাণিক ঐতিহ্যের প্রচুর মিল। সঙসপ্তক কাহিনি-তে কাহিনির ভিতরে কাহিনির ছড়াছড়ি। এ বইয়ের কুশীলব সারাক্ষণ পরস্পরকে রূপকথা-লোককথা শোনাচ্ছে। এ ছাড়া কিভির উপন্যাসের আরেকটা পৌরাণিক বৈশিষ্ট্য হলো বনবাসের গুরুত্ব। বইয়ের সাত নায়ক বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছে অরণ্যে বাস করে। সেই জীবনযাত্রার দরদি চিত্রণের দৌলতে উনিশ শতকের ফিনল্যান্ডের জঙ্গলের আশ্চর্য পরিবেশ পাঠকের আপন হয়ে ওঠে।