খুন শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে রক্তমাখা ছুরির হুংকারজড়ানো কোন ক্ষত-বিক্ষত দেহাবয়ব। কিন্তু চোখের সামনে ছটফট করতে থাকা জীবিত মানুষটির ভেতরকার রক্তাক্ত ক্ষতটিকে কী আমরা অনুভবের নামকরণে খুন বলে স্বীকৃতি দেই কখনও? জীবনভর অপকর্মে লিপ্ত থাকা অপরাধীসত্তাটি ঘোরে বা অঘোরে তার নিজ অনুভূতির কাছে খুন না হয়ে পারে কি? অথবা প্রিয়জন হারানো কোন নিঃসঙ্গ পথিক, যাকে তার অথর্ব জীবনটাকে শেষ না করতে পেরে তিলে তিলে বাঁচিয়ে রাখতে হয়! তার এই বেঁচে থাকাটাকেই কি আদৌ বেঁচে থাকা বলে? উপন্যাসটির নামকরণ করতে গিয়ে খুনের এই বিভিন্নমুখী সংজ্ঞার কাছে আমার ভাবনা মূর্ছিত হয়ে পড়ছিলো বারবার। সচারচর আমরা যে বুননে উপন্যাসের ভেতরের ভাবনাগুলি পড়তে অভ্যস্ত আমার খুনে সেই ধাঁচটি অনুপস্থিত। লেখক বা অন্যান্য চরিত্রের সরাসরি ভাবনাগুলো এ উপন্যাসটিতে নির্বাক। একজন অপরাধীর দৃষ্টিতে তার সমস্তজীবনের গল্পটা কেমন হতে পারে? ভাবনার গতি-প্রকৃতি, হৃদয়ের টানাপোড়েন এবং অন্যান্য চরিত্রগুলিকে বর্ণনা করার অনুভূতি একজন অন্ধকারযাত্রীর চোখ দিয়ে পড়ানোর এক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা খুন? উপন্যাসটির গল্প বলার ধরণ তাই গতানুগতিক থেকে কিছুটা ভিন্ন। গল্প বলার এ নিজস্বীয়তাটুকুর ভালো লাগা-মন্দ লাগার পুরো দায় আমি কাঁধে তুলে নিলাম। তবে তদন্তকালীন সময়গুলিতে অন্যান্য চরিত্রগুলির ভেতরটাকে পড়ার একটা সুযোগ পাঠকদের জন্য অবশ্যই রয়েছে! আমার দেখা কোন এক সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে রচিত উপন্যাস খুন। কিন্তু গল্প... জীবন থেকে নেয়া কোন চিত্র মাত্র, এটা অবশ্যই জীবনের সংজ্ঞা নয়। উপন্যাসে বর্ণিত আইনীবিষয় এবং ডাক্তারীথিমগুলোকে কাহিনীর চাহিদার ভিত্তিতে রূপ দেয়া হয়েছে। তাই এই বিষয়গুলোতে অতি মুন্সীয়ানা এড়িয়ে পড়ার অনুরোধ রইলো। মাঝখানের দু'একটি পর্বকে অতি ড্রামাটিক মনে হলেও আমি চাইবো পাঠক যেন উপন্যাসের পুরোটা পড়ে তবেই আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান। আমার লেখা প্রথম মৌলিক উপন্যাস খুন....আমার স্বপ্নযাত্রার প্রথম সারথী। সীমাবদ্ধতা ভুলে পাঠক আমার খুনের সঙ্গী হোক....খুন হোক পাঠক হৃদয় বইটির প্রেমে। যারা আমার লেখা উপন্যাস খুন পড়বেন তাদের প্রতি রইলো আমার হৃদয়সিক্ত একরাশ অব্যক্ত চির কৃতজ্ঞতা।
ফরিদপুরের মেয়ে মিনা শারমিনের জন্ম ২রা নভেম্বর। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক। ২০১৯ সালের শেষের দিকে অনেকটা নাটকীয়ভাবে লেখালেখির জগতে অণুপ্রবেশ করলেও অল্প সময়ের ব্যবধানেই প্রাপ্তির ঝুলিটা অনেকটাই চওড়া হয়ে উঠেছে। নিয়মিতই লিখছেন গল্প, কবিতা এবং উপন্যাস। ২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তার প্রথম একক রোমান্টিক থ্রিলার উপন্যাস "খুন" প্রকাশিত হয়। পরিবার পাবলিকেশন্সের প্রকাশনায় বেশ পাঠকপ্রিয় উপন্যাস "খুন" এর সফলতা তাকে প্রতিনিয়তই অনুপ্রাণিত করে নতুনভাবে নিজেকে প্রমাণ করার। একক উপন্যাস ছাড়াও বেশ কিছু সংকলনে তার গল্প, কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশের অপেক্ষায় আছে নতুন একক উপন্যাসসহ বেশকিছু অপ্রকাশিত সংকলন। প্রিয় শখ, বই নিয়ে নানারকম স্বপ্নে বুঁদ হয়ে থাকা, আর একমাত্র সন্তান আফিফের সাথে সময় কাটানো।