শব্দের সঙ্গে শব্দের অচেনা সম্পর্ককে আবিষ্কার করার সুযােগ করে দিয়েছেন স্বরলিপি। তাও আবার নান্দনিক জটিলতাকে আলগােছে পাশ কাটিয়ে। এই বইয়ের কবিতায় চিত্রকল্পে ডুব দেবার সুযােগ তিনি রেখেছেন, চিত্রকল্পে হাবুডুবু খাবার সম্ভাবনা রেখেই। মৌলিক অনুভূতিগুলােকে কবিতার শরীর থেকে এমনভাবে প্রতিফলিত করেছেন, যাতে সেগুলাে চোখে না লেগে মর্মেই লেগে যায় প্রথম পাঠেই। আর দৃশ্য ও অদৃশ্য বিষয়বস্তর উপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে না দিয়ে পাঠককে তার নিজের মতাে করে বুঝে নেবার জায়গা করে দিয়েছেন স্বরলিপি। পাঠককে তার নিজের সামনে অনুন্মােচিত নিজেকে তুলে ধরার যে পরিস্থিতি এই বইয়ের কবিতাগুলােতে তৈরি হয়েছে, তা অনন্য। পঙক্তিবিন্যাসে যে নির্মম সারল্য স্বরলিপি বিস্তার করেছেন, তা অনবদ্য। পঙক্তিবিভাজনে তিনি যে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন, তা সুখকর। আয়ুর আমিষ যেন এর নামের মতােই জীবন ও চিত্রকল্পের বহুমুখী এক বাস্তবায়ন প্রকল্প। পৃথিবীতে সভ্যতার নামে জীবনদর্শনের ক্রমবিবর্তন যেন ক্রমবিভৎসতায় পর্যবসিত আজ। আয়ুবর্ধনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা দিকে দিকে; তবু ফুরিয়ে যাচ্ছে আয়ু। চিত্রকল্পের অভিনবত্বকে পঙক্তির সাবলিলতার ভেতর প্রােথিত করে করে যে কবিতার বিস্তার আয়ুর আমিষ-এ নিঃসন্দেহে তা কবির দর্শনের সঙ্গে পাঠকের জীবনােপলব্ধিকে প্রযুক্ত করে নতুন এক ভাবনাদুয়ার উন্মােচন করবে।