শৈশবে একদিন রাতে ঘুমাতে যাবার আগে আব্বাকে বললাম, আব্বা আমি কবিতা লিখেছি। আব্বা বললেন, শুনাও। শোনালাম। খুশি হলেন। তারপর বললেন কবিতার ‘ক’ও হয়নি! বাবার কাছে অস্তিত্বের প্রশ্নে মারাত্মক জেদ চাপলো মনে। লেখা শুরু করলাম। দুটি উপন্যাস সহ প্রায় সাড়ে চারশ কবিতা লিখলাম। বিধিবাম, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ আমার লেখালেখির কক্ষে বৈদ্যুতিক তারের সঙ্গে সংযুক্ত ওয়াই-ফাই সংযোগ থেকে ভয়াবহ অগ্নুৎপাতের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তেই ঘরের সকল আসবাব, ল্যাপটপ পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায়। সকল লেখা ল্যাপটপের ফাইলে ছিলো। প্রযুক্তি খুব বেশি ভালো না বোঝার কারণে গুগলে রাখার জ্ঞান হয়নি তখনও। ফলে আমার জীবনের প্রায় একযুগের সকল লেখা ছাই হয়ে আকাশে মিলিয়ে গেলো। লেখাগুলোর ৯০ শতাংশই ফেসবুকিং বা অন্য কোনোভাবে প্রকাশ করিনি বা করতেও পারিনি। ৩-৪ মাস অসুস্থ ছিলাম। মসজিদে বসে বসে কেঁদেছি। যে লেখাগুলো হারিয়ে গেছে তা পুনরায় শত চেষ্টা করেও আর লিখতে পারিনি। লেখালেখি প্রায় বন্ধ হয়ে গেলো। শিল্প-সাহিত্য সংশ্লিষ্ট শুভার্থীরা ফের লেখায় ফিরতে প্রেরণা দিলেন। আবার শুরু করলাম। তবে এবার কবিতা বা উপন্যাস নয়। মননশীলতার পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিলাম। পত্রপত্রিকায় কলাম লেখা শুরু করলাম। সমাজের নানা অসঙ্গতি তোলে আনলাম লেখায়। লেখার চেষ্টা করলাম ১৯৭১ সালে নিজ উপজেলায় পাকহানাদার বাহিনীর বর্বরতার মর্মন্তুদ আখ্যান। নানা শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য লিখেছি। রাষ্ট্রযন্ত্রের ভুলগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছি। জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ ও নারী নির্যাতন নিয়ে বিপুল সংখ্যক লেখা লিখেছি। ব্যক্তি জীবন, শিশু ও মানুষের মনস্তত্ত্ব, মনস্তত্ত্বের অলিগলি থেকে শুরু করে পরিবেশ, সমাজ, বিশ্ববীক্ষণ ও রাষ্ট্রীয় সকল বিষয় আশয় নিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি।